সিলেটের গোলাপগঞ্জ

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:১০ পিএম

সিলেটের গোলাপগঞ্জ: ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়

বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত সিলেট জেলার একটি উপজেলা হলো গোলাপগঞ্জ। এর অবস্থান ২৪.৮৬° উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২.০২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ১০৫.৫৭ বর্গ মাইল (২৪৭ বর্গ কিলোমিটার) আয়তনের এই উপজেলা উত্তরে সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলা, দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলা এবং পশ্চিমে সিলেট সদর উপজেলার সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে।

নামকরণের রহস্য:

গোলাপগঞ্জ নামের উৎপত্তি এখনও রহস্যময়। প্রামাণ্য কোন দলিল পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি অনুযায়ী, কোনও রাজা, বাদশাহ, স্থানীয় শাসক কিংবা গোলাব রায় নামের একজন দেওয়ানের নামানুসারে এই নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৫৪০ সালে পাঠান আমলে গোলাব রায় নামে একজন দেওয়ানের নিয়োগের পর থেকে এই এলাকা ‘গোলাবগঞ্জ’ নামে পরিচিতি লাভ করে এবং পরে ‘গোলাপগঞ্জ’ নামে পরিচিত হয়। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী সুরমা নদীর তীরে গোলাপ ফুলের প্রচুর চাষের কারণে এ নামকরণ হয়েছে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

গোলাপগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। হযরত বাহাউদ্দিন (রঃ) মাজার, শ্রীচৈতন্যদেবের বাড়ি ও মন্দির, কৈলাশটিলা এবং দেওয়ানের পুল এর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। নানকার বিদ্রোহের অংশ হিসেবে এখানে রণিকেলী ও ভাদেশ্বর বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধেও গোলাপগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; সুন্দিশাইলে একটি গণকবর ও একটি শহীদ মিনার রয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

উপজেলাটিতে ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে ১০১টি মৌজা ও ২৮৫টি গ্রাম আছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, গোলাপগঞ্জের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ১৬ হাজার। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বসবাস করে।

অর্থনীতি:

গোলাপগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, কচু, সুপারি, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ প্রধান কৃষি ফসল। মাছের চাষ, সবজি চাষ এবং গবাদি পশুপালনও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি আনারস চাষের জন্য এই উপজেলা বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, যা পর্যটন ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। পাহাড়ি এলাকায় আনারসের সাথে মাল্টা, কাজুবাদাম, কফি, কমলা ও লেবুর উৎপাদন হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদনও এই উপজেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

গোলাপগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পর্যটন:

গোলাপগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কৈলাশটিলা, আনারস বাগান, শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।

উপসংহার:

ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নয়নের সমন্বয় গোলাপগঞ্জকে সিলেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আনারস চাষের মাধ্যমে পর্যটন ক্ষেত্রেও এই উপজেলা একটি নতুন পরিচয় তৈরি করছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • গোলাপগঞ্জ উপজেলা সিলেট জেলার অন্তর্গত।
  • নামকরণের উৎপত্তি রহস্যময়, জনশ্রুতির উপর নির্ভরশীল।
  • হযরত বাহাউদ্দিন (রঃ) মাজার, শ্রীচৈতন্যদেবের বাড়ি ও মন্দির, কৈলাশটিলা ও দেওয়ানের পুল উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা।
  • কৃষি, বিশেষ করে আনারস চাষ, অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সিলেটের গোলাপগঞ্জ

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সিলেটের গোলাপগঞ্জে এই ঘটনা ঘটেছে।