সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২:০৯ এএম

সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক উপজেলা হল তাড়াশ। প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এই উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। ২৪°২০' থেকে ২৪°৩৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৫' থেকে ৮৯°২৭' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন ২৯৭.২ বর্গকিলোমিটার। উত্তরে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলায় তাড়াশ উপজেলা অবস্থিত।

তাড়াশ উপজেলার নামকরণের বিষয়ে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া না গেলেও, একাধিক জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, রায়বাহাদুর নামক এক জমিদারের মেয়ে 'তারা'র নাম থেকে এ উপজেলার নামকরণ হয়েছে। আরেকটি জনশ্রুতি অনুসারে, এককালে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই অঞ্চলে বাঘ, ভালুক ও ডাকাতের উপদ্রবের কারণে 'তাড়াশ' (ত্রাস থেকে) নামকরণ হয়েছে।

ঐতিহাসিক দিক দিয়ে তাড়াশ উপজেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে নওগাঁয় পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৩০ জন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাত্র নেতারা ১০৭টি সিভিল গান একত্রিত করে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাড়াশ থানা আক্রমণ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন। এছাড়াও ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে তাড়াশ উপজেলার ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

অর্থনীতিতে কৃষি হচ্ছে তাড়াশ উপজেলার মেরুদণ্ড। জনগোষ্ঠীর ৮৪.৭৫% কৃষিতে নিয়োজিত। ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা, পাট, তিল (প্রায় বিলুপ্ত), আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তরমুজ, পেঁপে, কলা ইত্যাদি এই অঞ্চলের প্রধান ফসল ও ফল। চলনবিল তাড়াশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে মাছ উৎপাদন হয় যা দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়।

তাড়াশ উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে চলনবিল উল্লেখযোগ্য। নবগ্রাম মসজিদ (১৪৫৪), শাহী মসজিদ (১৫২৬), বেহুলার কূপ, বারুহাস মসজিদ (১৩২০), ইসলামপুর জামে মসজিদ (১৮০২) ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনাও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে, তাড়াশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ রয়েছে। তবে শিক্ষার হার এখনও উন্নততর করার প্রয়োজন রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

তাড়াশ উপজেলা সিরাজগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এই উপজেলাকে সিরাজগঞ্জের মধ্যে অনন্য করে তুলেছে। ভবিষ্যতে এই উপজেলার আরও উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

মূল তথ্যাবলী:

  • তাড়াশ উপজেলা সিরাজগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
  • মুক্তিযুদ্ধে তাড়াশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
  • চলনবিল তাড়াশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
  • ঐতিহাসিক মসজিদ ও মন্দিরসমূহ।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের প্রয়োজন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।