সদরপুর, দোয়ারাবাজার

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৪:৪৯ এএম
নামান্তরে:
সদরপুর দোয়ারাবাজার
সদরপুর, দোয়ারাবাজার

সদরপুর ও দোয়ারাবাজার: দুটি ভিন্ন পরিচয়

বাংলাদেশের দুটি ভিন্ন উপজেলা, ফরিদপুরের সদরপুর এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, তাদের নিজস্ব ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে সমৃদ্ধ। এই প্রবন্ধে আমরা উভয় উপজেলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরব।

সদরপুর (ফরিদপুর):

অবস্থান: ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলা ২৬১.২৯ বর্গ কিমি আয়তনের। ২৩°২৪´ থেকে ২৩°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৭´ থেকে ৯০°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ ও ভুবনেশ্বর নদী এ উপজেলার প্রধান জলাশয়।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য: ১৮৬৩ সালে সদরপুর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বাইশরশি জমিদার বাড়ি, কৃষ্ণপুর কালীমন্দির, বাইশরশি মঠ প্রভৃতি প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ এখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। মুক্তিযুদ্ধে বাজিতপুর ও জামতলায় পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়।

জনসংখ্যা ও অর্থনীতি: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সদরপুরের জনসংখ্যা ১৮৬২৫৪। কৃষিই এখানকার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস (৬৭.৭৯%), অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে অকৃষি শ্রমিক, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহণ, চাকরি ইত্যাদি।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি: সদরপুরে ২টি কলেজ, ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১০) এবং বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমি (১৯১৪) উল্লেখযোগ্য। সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইব্রেরি, সিনেমা হল, সাহিত্য সংগঠন, মহিলা সংগঠন, ক্লাব ও খেলার মাঠ রয়েছে।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ):

অবস্থান: সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার আয়তন ২৬৩.৩৫ বর্গ কিমি। ২৪°৫৮´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৪´ থেকে ৯১°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে ছাতক উপজেলা, পূর্বে ছাতক ও সিলেট সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা অবস্থিত। সুরমা, যদুকাটা, বগরা নদী এ উপজেলার প্রধান নদী।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য: ১৯৭৬ সালে দোয়ারাবাজার থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। নামকরণের পেছনে স্থানীয় বাজারের দুইবার স্থানান্তরের কাহিনী রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে দোয়ারাবাজার সংগ্রাম কমিটির বাহিনী কান্দারগাঁওয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে। পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপুর, টিলাগাঁও এবং বেটিরগাঁও এলাকায়ও মুক্তিযুদ্ধের তীব্র যুদ্ধ হয়।

জনসংখ্যা ও অর্থনীতি: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দোয়ারাবাজারের জনসংখ্যা ২২৮৪৬০। কৃষি (৭১.১৪%) এখানকার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস। অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে অকৃষি শ্রমিক, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহণ, চাকরি ইত্যাদি। টেংরাটিলা এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি: দোয়ারাবাজারের গড় সাক্ষরতার হার ৩০.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বড়খাল বহুমুখী স্কুল ও কলেজ, সমুজ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, দোয়ারাবাজার কলেজ, টেংরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ঘিলাছড়া মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলাউড়া দারুসছুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য। সংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্লাব ও খেলার মাঠ রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • সদরপুর উপজেলা ফরিদপুর জেলায় অবস্থিত।
  • সদরপুর ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
  • বাইশরশি জমিদার বাড়ি সদরপুরের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
  • দোয়ারাবাজার উপজেলা সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।
  • দোয়ারাবাজার ১৯৮৫ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
  • টেংরাটিলায় প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে।
  • মুক্তিযুদ্ধে উভয় উপজেলাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।