শেখ আবদুল মান্নান (জন্ম: ১৯২৮ - মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তিনি ‘এস এ মান্নান’ এবং ‘লাডু ভাই’ নামেও পরিচিত ছিলেন। তার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার পার্ক সার্কাসে। শৈশব কাটে সেখানেই। তার বাবা শেখ আব্দুল গণি এবং মা আঞ্জুমান আরা বেগম। শেখ আবদুল মান্নান কলকাতার ক্যাথোভিয়াল মিশন স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিক এবং ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে আই.এ এবং ১৯৪৮ সালে বি.এ পাস করেন।
সাংবাদিকতা জীবনে তিনি প্রথমে কলকাতার দৈনিক আজাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে তার পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসে এবং দৈনিক আজাদ ঢাকায় চলে আসলে তিনি সেখানে ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ‘খেলার খবর’ নামে একটি ক্রীড়া সাপ্তাহিকেরও প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানে ক্রীড়া সাংবাদিকতার একজন অগ্রদূত হিসেবে তিনি পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকার ক্রীড়া বিভাগের প্রধান এবং কিছুদিন রেসিং করেসপন্ডেন্ট হিসেবেও কাজ করেন। তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বার্তা বিভাগেও কাজ করেছেন। ৬০-এর দশকে তিনি পাকিস্তান অবজার্ভারে ঢাকা ফুটবল লীগে পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ব্যাপক প্রাধান্যের বিরুদ্ধে কণ্ঠ উথ্থাপন করেন এবং ঢাকা লীগের পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত একটি দলকে ‘মাকরানি এগারো’ নামে অভিহিত করেন।
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান ক্রীড়া ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে পাকিস্তান অবজার্ভারের ক্রীড়া পাতা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৬৪ সালে তিনি টোকিও অলিম্পিক গেমসে পূর্ব পাকিস্তানের ডেলিগেশন ম্যানেজার হিসেবে যান।
মুক্তিযুদ্ধে শেখ আবদুল মান্নানের অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সন্ধ্যায় রাজাকার বাহিনী তার পুরানা পল্টনের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।