মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক অমূল্য সম্পদ
১৯৩৬ সালে ঢাকার হাজারিবাগে প্রতিষ্ঠিত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কলকাতা মোহামেডানের ঢাকা শাখা হিসেবে যাত্রা শুরু করে এই ক্লাবটি। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে ক্রীড়াঙ্গনে এক স্থবিরতার সৃষ্টি হয়, ঠিক সেই সময়ে কলকাতা মোহামেডানের বিখ্যাত ফুটবলার মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকায় এসে মোহামেডানের দায়িত্ব নেন এবং ক্লাবটিকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা ওয়ান্ডার্সের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও, ১৯৫৬ সালে ওয়ান্ডার্সের কিছু তারকা খেলোয়াড় মোহামেডানে যোগদানের পর থেকে ক্লাবটির উত্থান শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে তারা প্রথমবারের মতো ঢাকা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং স্বাধীনতা দিবস ফুটবল টুর্নামেন্টেও জয়ী হয়। এরপর থেকে ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, জিমন্যাস্টিকসসহ নানা খেলায় মোহামেডান অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে।
১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে মোহামেডান বাংলাদেশের ফুটবলে একচ্ছত্র রাজত্ব করে। ১৯৭০ সালে কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন মোহামেডানে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে লিগ ফুটবল পুনরায় শুরু হলে আবাহনী ক্রীড়াচক্রের উত্থান ঘটে এবং মোহামেডানের অনেক তারকা খেলোয়াড় সেখানে যোগদান করে। তবুও মোহামেডান ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সালে টানা দুবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়।
১৯৮০-১৯৯০ দশক মোহামেডানের স্বর্ণযুগ ছিল। এই সময় তারা একের পর এক শিরোপা জিতে ফুটবলারাও রেকর্ড গড়ে। ইরানি গোলরক্ষক নাসের হেজাজীর যোগদানও এই সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মোহামেডান ট্রিপল ক্রাউন জয় করে এবং লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯০ এর দশক এবং ২০০০ এর দশকেও মোহামেডানের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে, যেমন লিগ ও ফেডারেশন কাপ জয়।
ক্রিকেটেও মোহামেডানের অবদান উল্লেখযোগ্য। তারা ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত ৯ বার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ জিতেছে।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কেবল ক্রীড়ার মাধ্যমে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও বাংলাদেশের জনগণের কাছে এক অনন্য স্থান অধিকার করে রেখেছে।