সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ ওরফে ‘সীমান্তিক শামীম’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের পার্শ্ববর্তী রাজ্যের একটি বিমানবন্দরে আটক হয়ে কারাভোগ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রবাসী কমিউনিটির নেতারা এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই খবর সিলেটে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় শামীম আহমদ সিলেটেই ছিলেন। ৪ঠা আগস্ট সিলেটের রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে বিরোধী দল দমনে সক্রিয় ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের দিনই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। নগরের চৌহাট্টা এলাকায় তার নিজের মালিকানাধীন ইউনিক ফার্মেসিতে ছাত্র-জনতা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ৫ই আগস্টের পর থেকে শামীম আহমদ সিলেটে আত্মগোপনে ছিলেন। আগস্টের শেষদিকে তিনি ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে লন্ডনে যান, সাথে তার ছোট ভাই শাহীন আহমদও ছিলেন। লন্ডনে থেকে কিছুদিন ভার্চুয়ালি সিলেটের স্বজন ও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখলেও, গত ১৫ দিন ধরে তার সাথে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের কয়েকজন কমিউনিটি নেতা জানিয়েছেন, শামীম আহমদ প্রায় ১৫ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য লন্ডন থেকে রওয়ানা দেন। মিশিগানে কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর না থাকায়, তিনি পাশের একটি রাজ্যের বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সেখানকার ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে বিপুল পরিমাণ নগদ ডলার ও পাউন্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চাইলে আটক করে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মিশিগানে তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবং শিগগিরই তার মুক্তি পাওয়ার আশা করছেন।
শামীম আহমদ রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। তিনি এনজিও সংস্থা ‘সীমান্তিক’ এর সাবেক চেয়ারম্যান। সিলেট যুবলীগের রাজনীতিতে চৌহাট্টাকেন্দ্রিক তার একটি নিজস্ব গ্রুপ রয়েছে এবং বিতর্কিত ঘটনায়ও তিনি জড়িত ছিলেন। তার বাড়ি জকিগঞ্জে। সম্প্রতি এলাকায় ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলেন। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সীমান্তিকের চিফ পেট্রোন ড. আহমদ আল কবিরের ঘনিষ্ঠজন। দেশ ছেড়ে যাওয়া তার ভাই শাহীন আহমদও সিলেট যুবলীগ নেতা এবং বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। শামীম আহমদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কয়েক বছর আগে নগরের কুমারপাড়া ঝরনারপাড় এলাকায় নিজের নামে বাসা ক্রয় করেছেন। প্রায় ৫ বছর আগে অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ আল কবিরের পরামর্শে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন এবং কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হন। তবে, তার বিরোধী বলয় শক্তিশালী ছিল। বিশেষ করে, ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগে আসা নেতারা তাকে মেনে নিতে পারেননি, ফলে জেলা যুবলীগের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ অব্যাহত ছিল। ৫ই আগস্টের ঘটনার পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার নিজস্ব গোষ্ঠীর কয়েকজন নেতা ছাড়া কারও সাথে যোগাযোগ রাখেননি। এ নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।