শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ - ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮) বাংলা সাহিত্যের এক অমর কথাশিল্পী। ঔপন্যাসিক, গল্পকার, ও প্রবন্ধকার হিসেবে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তার বহু উপন্যাস ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু ছিল বাঙালি গ্রামীণ ও নগর জীবন, তৎকালীন সমাজের কুসংস্কার ও অসামাজিক কার্যকলাপ। তিনি সহজ সাবলীল ভাষা ব্যবহার করতেন এবং তার লেখার ভাষা ছিল খুবই আকর্ষণীয়।
শরৎচন্দ্রের জন্ম হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে একটি দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। অর্থের অভাবে শৈশবেই ভাগলপুরে মাতুলালয়ে বাস করতে হয়েছিল। পরে ভাগলপুর জেলা স্কুল, হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুল ও তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন, কিন্তু এফএ পরীক্ষায় বসতে পারেননি। জীবিকার জন্য বহু চাকরি করেন, যেমন, বনেলী রাজ-এস্টেট, কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক, বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে কেরানি। একসময় সন্ন্যাসী সেজে ঘর ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন।
তার প্রথম মুদ্রিত গল্প ‘মন্দির’ (১৯০৩)। ‘বড়দিদি’ (১৯১৩) উপন্যাস প্রকাশের পর তিনি জনপ্রিয় হন। ‘পরিণীতা’, ‘পল্লী সমাজ’, ‘দেবদাস’, ‘চরিত্রহীন’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘দত্তা’, ‘গৃহদাহ’, ‘পথের দাবী’, ‘শেষ প্রশ্ন’ ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। ‘পথের দাবী’ উপন্যাস ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। তার অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য তিনি জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯২৩) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি (১৯৩৬) পেয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় মারা যান। শরৎচন্দ্রের লেখা বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আজও তাঁর লেখার জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ রয়েছে।