রমনা রেসকোর্স, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত, ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এর ইতিহাস মুঘল আমলের ‘বাগ-ই-বাদশাহী’ থেকে শুরু হয়। ১৬১০ সালে সুবাহদার ইসলাম খানের আমলে ঢাকার উত্তর শহরতলিতে ‘মহল্লা চিশতিয়া’ এবং ‘মহল্লা সুজাতপুর’ নামে দুটি আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠে, যার মধ্যে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুঘল আমলের পর রমনা ধীরে ধীরে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ১৮২৫ সালে ব্রিটিশ কালেক্টর মি. ডয়েস এর উন্নয়ন করেন এবং রমনাকে একটি পরিচ্ছন্ন এলাকায় রূপান্তরিত করে রমনা গ্রীন নামকরণ করেন। এলাকাটি ঘোড়দৌড়ের মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাঠের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় এবং ‘রমনা রেসকোর্স’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি শাসনামলে ঢাকার একটি থানার নাম ছিল রমনা।
রমনা রেসকোর্স ঢাকার নওয়াবদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। নওয়াবগণ এলাকায় সুন্দর বাগান (শাহবাগ), চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ঘোড়দৌড় জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৮৫১ সালে ঢাকা ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় নবগঠিত প্রদেশের গভর্নরের বাসভবন (পুরাতন হাইকোর্ট ভবন) এখানেই তৈরি হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ফলে এলাকার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।
১৯৪৭ সালের পর রমনা রাজনৈতিক সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলমুক্তির পর এখানেই তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও এখানেই প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এবং ইন্দিরা গান্ধী যৌথভাবে এক জনসভায় বক্তৃতা দেন। ১৯৭৫ সালের পর এলাকাটি সবুজে ঘেরা পার্ক হিসেবে সাজানো হয় এবং শিশুদের জন্য একটি পার্ক তৈরি করা হয়। ১৯৯৯ সালে ‘শিখা চিরন্তন’ ও স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক স্মৃতি ধারণ করা হয়। বর্তমানে এটি ঢাকার অন্যতম প্রধান নগর উদ্যান এবং ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত।