রাজৈর উপজেলা

আপডেট: ৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪১ এএম
নামান্তরে:
Rajoir Upazila
রাজৈর উপজেলা

রাজৈর উপজেলার বিস্তারিত লেখা

বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত রাজৈর উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১১ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা ঢাকা বিভাগের অধীনে অবস্থিত এবং মাদারীপুর জেলার সর্ব-পশ্চিমে অবস্থান করছে। উত্তরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে মাদারীপুর সদর ও শিবচর উপজেলা এবং পশ্চিমে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সাথে এর সীমান্ত রয়েছে। মাদারীপুর বিলরুট নদী, কুমার আপার নদী এবং কুমার লোয়ার নদী এই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীনকালে রাজৈর কোটালীপাড়া নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে গঙ্গারিডাই জাতি এখানে রাজত্ব করতো। পরবর্তীতে গুপ্ত সাম্রাজ্য, পাল রাজবংশ, সেন রাজবংশ এবং চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অধীনে এ অঞ্চল ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৪ সালে রাজৈর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৮৮১ সালে সেনদিয়া গ্রামের অম্বিকাচরণ মজুমদার পূর্ববঙ্গের প্রথম রাজনৈতিক দল 'ফরিদপুর পিপলস এসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয় এই অঞ্চল। ১৯৭১ সালে সেনদিয়া গ্রামে ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়।

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:

রাজৈরের ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°০৬´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৬´ থেকে ৯০°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর আয়তন ২২৯.২৮ বর্গ কিলোমিটার। এটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপে অবস্থিত এবং গাঙ্গেয় প্লাবনভূমি এলাকা। শুষ্ক মৌসুমে ভিজে থাকে এবং বর্ষায় প্লাবিত হয়। রাজৈরের চান্দার বিল ও বাগিয়ার বিলের ৫১৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে প্রাকৃতিক পিট কয়লা রয়েছে।

অর্থনীতি:

রাজৈরের অর্থনীতিতে কৃষি প্রধান ভূমিকা পালন করে। মোট আয়ের ৬০.৬৮% কৃষি থেকে আসে। খেজুর রস ও খেজুর গুড় এর জন্য এটি বিখ্যাত। পাট, তিল, সরিষার তেল ইত্যাদিও বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয়। বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা, কুটির ও তাঁতশিল্প অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:

রাজৈরের ভাষায় বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সামান্য বৈচিত্র্য রয়েছে। গাজীর গান, কীর্তন, বাউল গান প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার এখানে প্রচলিত। সেনদিয়া ও কদমবাড়ীতে চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, খালিয়ার রথের মেলা, বাজিতপুরের মাঘীপূর্ণিমা মেলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী রাজৈরের সাক্ষরতার হার ৪৮.২%। এখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা রয়েছে। রাজৈর ডিগ্রি কলেজ, খালিয়া রাজারাম ইন্সটিটিউশন উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল ও বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

জাতীয় মহাসড়ক এন৮ রাজৈরকে ঢাকা, বরিশাল ও পটুয়াখালীর সাথে সংযুক্ত করেছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক রাজৈরকে গোপালগঞ্জের সাথে সংযুক্ত করে। নৌপথেও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।

উপসংহার:

রাজৈর উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এই লেখায় উপজেলার সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে আরও তথ্য যোগ করার প্রয়োজন থাকলে পরবর্তীতে আপডেট করা হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • রাজৈর উপজেলা মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত।
  • এটি ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
  • ১৯১৪ সালে থানা, ১৯৮৪ সালে উপজেলায় উন্নীত।
  • খেজুর গুড় ও রসের জন্য বিখ্যাত।
  • চান্দার বিল ও বাগিয়ার বিলে পিট কয়লার ভান্ডার আছে।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।