ওয়াসীমুল বারী রাজীব: বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এক অমিত অবদান
ওয়াসীমুল বারী রাজীব, বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের একজন অবিস্মরণীয় অভিনেতা। তিনি ‘রাজীব’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারী পটুয়াখালীর দুমকিতে জন্মগ্রহণ করেন। চার শতাধিক বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি অমিত সাফল্য অর্জন করেন। প্রধানত খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে তিনি অনেক চলচ্চিত্রে নানা ধরনের চরিত্রেও অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তার চলচ্চিত্র জীবনের শুরু হয় ১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ চলচ্চিত্র দিয়ে। তবে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘খোকন সোনা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অভিনয়ের আগে তিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ‘হীরামতি’ (১৯৮৮), ‘দাঙ্গা’ (১৯৯১), ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’ (২০০০) এবং ‘সাহসী মানুষ চাই’ (২০০৩) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘তিনি দাঙ্গা’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘ভাত দে’, ‘উছিলা’, ‘মিয়া ভাই’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’, ‘হুমকি’, ‘মা মাটি দেশ’ ইত্যাদি। রাজীবের অভিনয়শৈলী ছিল অনন্য। ঝাঁঝালো কণ্ঠ, ভয়ানক চাহনি এবং কৌতুকপূর্ণ অভিব্যক্তি তাকে খলনায়ক হিসেবে স্মরণীয় করে তুলেছে।
চলচ্চিত্রের বাইরেও রাজীবের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদের (জাসাস) প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘ফ্রেন্ডস মুভিজ’ নামে একটি প্রযোজন প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করতেন। এছাড়াও তিনি বিএফডিসির ব্যবস্থাপক এবং জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইসমত আরা রাজীবের স্ত্রীর নাম। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল। ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনায় রাজীবের দুই জমজ ছেলে মারা যান। তার বাকি ছেলের নাম সায়নুল বারী দ্বীপ এবং মেয়েদের নাম রানিসা রাজীব এবং রাইসা রাজীব। ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ৫২ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে তিনি মারা যান এবং সেখানেই সমাহিত হন।
রাজীব চৌধুরী বাংলাদেশী চলচ্চিত্র জগতে এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন, যার অবদান সর্বদাই স্মরণীয় থাকবে।