যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (United States Department of Defense), যা সাধারণত পেন্টাগন নামে পরিচিত, হলো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের একটি নির্বাহী শাখা। এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত সকল সংস্থা ও কাজের সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত। ২০২২ সালের নভেম্বরের হিসাবে, ভারত (এবং সম্ভবত চীন, যদি কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন অন্তর্ভুক্ত থাকে) এর পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিয়োগকারী হিসেবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের সুনাম আছে। এতে ১৪ লাখের বেশি সক্রিয় কর্মী, ৭ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড এবং রিজার্ভিস্ট এবং ৭ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি বেসামরিক কর্মী রয়েছে, মোট কর্মীর সংখ্যা ২৯ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সদর দপ্তর ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন কাউন্টির পেন্টাগনে অবস্থিত, যা ওয়াশিংটন ডি.সি.র ঠিক বাইরে। এই দপ্তরের ঘোষিত লক্ষ্য হলো ‘যুদ্ধ প্রতিরোধ এবং আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক বাহিনী সরবরাহ করা’। এই দপ্তরের প্রধান হলেন প্রতিরক্ষা সচিব (Secretary of Defense), যিনি কেবিনেট স্তরের একজন কর্মকর্তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যক্ষভাবে জবাবদিহি করেন। রাষ্ট্রপতি একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-Chief)।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের অধীনে তিনটি সাবোর্ডিনেট সামরিক দপ্তর রয়েছে: সেনাবাহিনী দপ্তর (Department of the Army), নৌবাহিনী দপ্তর (Department of the Navy), এবং বিমানবাহিনী দপ্তর (Department of the Air Force)। এ ছাড়াও চারটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিরক্ষা দপ্তরের অধীন: ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (DIA), ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (NSA), ন্যাশনাল জিওস্পেশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (NGA), এবং ন্যাশনাল রিকোনিসেন্স অফিস (NRO)। অন্যান্য প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে: ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (DARPA), ডিফেন্স লজিস্টিকস এজেন্সি (DLA), এবং আরও অনেক। এছাড়াও, ১১ টি আঞ্চলিক বা কার্যকরী একীভূত যুদ্ধকারী কমান্ড রয়েছে যা সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের ইতিহাস দীর্ঘ এবং জটিল। ১৭৭৪ সালে প্রথম কনটিনেন্টাল কংগ্রেস প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি শুরু করার সুপারিশ করেছিল, এবং ১৭৭৫ সালে কনটিনেন্টাল আর্মি গঠন করা হয়েছিল। ১৭৮৯ সালে যুদ্ধ দপ্তর (War Department) প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ১৭৯৮ সালে নৌবাহিনী দপ্তর (Navy Department) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৭ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (National Security Act) পাস করা হয়, যার মাধ্যমে জাতীয় সামরিক প্রতিষ্ঠান (National Military Establishment) গঠিত হয়। ১৯৪৯ সালে এটিকে ‘প্রতিরক্ষা দপ্তর’ নামকরণ করা হয়।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের বাজেট বিশাল। ২০২৩ সালের মার্চে ২০২৪ অর্থবছরের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৮৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই দপ্তরের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বহু সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এছাড়াও, প্রতিরক্ষা দপ্তরের স্বচ্ছতার সাথে তথ্য প্রদানের নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের সংগঠন এবং কাজগুলি যুক্তরাষ্ট্রের কোডের ১০ম খণ্ডে বর্ণিত।