মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা: বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ
এই নামটি একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কথা তুলে ধরবো যাদের নামে ‘মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা’ নামটি ব্যবহৃত হয়।
১. কবি ও লেখক গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪):
বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট কবি ও লেখক ছিলেন গোলাম মোস্তফা। ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার মনোহরপুর গ্রামে তার জন্ম। তার পিতা ছিলেন কাজী গোলাম রব্বানী এবং পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। উভয়ই ছিলেন সাহিত্যানুরাগী এবং ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপণ্ডিত।
তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় চার বছর বয়সে নিজ গৃহে এবং পরে দামুকদিয়া ও ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালায়। ১৯১৪ সালে শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯১৬ সালে দৌলতপুর বি.এল. কলেজ থেকে আই.এ. এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। ১৯২২ সালে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯২০ সালে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলে শিক্ষকতা জীবনের সূচনা করেন। পরবর্তীতে কলকাতা হেয়ার স্কুল, কলকাতা মাদ্রাসা এবং বালিগঞ্জ সরকারি ডেমনস্ট্রেশন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ সালে ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ১৯৫০ সালে অবসর নেন।
সাহিত্যে তার অবদান অপরিসীম। ‘আন্দ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ কবিতাটি ১৯১৩ সালে ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’তে প্রকাশিত হয়েছিল। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘রক্তরাগ’, ‘খোশরোজ’, ‘সাহারা’, ‘হাসনাহেনা’, ‘বুলবুলিস্তান’ এবং উপন্যাস ‘রূপের নেশা’, ‘ভাঙ্গাবুক’, ‘একমন একপ্রাণ’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘ইখওয়ানুস সাফা’, ‘মুসাদ্দাস-ই-হালী’, ‘কালাম-ই-ইকবাল’, ‘শিকওয়া’ এবং ‘আল-কুরআন’ এর মত গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। তার গভীর চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায় ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’, ‘ইসলামে জেহাদ’, ‘আমার চিন্তাধারা’ প্রভৃতি গ্রন্থে। ‘বিশ্বনবী’ তার অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল সৃষ্টি। তিনি গায়ক ও গীতিকার হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন।
১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
২. এ.এন.এম. গোলাম মোস্তফা (১৯৪২-১৯৭১):
এ.এন.এম. গোলাম মোস্তফা ছিলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একজন অকুতোভয় সাংবাদিক। ১৯৪২ সালে নীলফামারী জেলার পঙ্গাগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দৈনিক পূর্বদেশের প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। তার ছেলে অনির্বাণ মোস্তফা তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান।
মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা (স্পষ্টীকরণ)
• কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) বাংলা সাহিত্যে ইসলামি চেতনার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন।
• তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে ‘রক্তরাগ’, ‘বিশ্বনবী’ এবং ‘বনি আদম’।
• তিনি একজন সফল শিক্ষক ও অনুবাদক ছিলেন।
• এ.এন.এম. গোলাম মোস্তফা (১৯৪২-১৯৭১) ছিলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একজন শহীদ সাংবাদিক।
মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা নামটি দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত। একজন বিখ্যাত কবি ও লেখক এবং অপরজন মুক্তিযুদ্ধের একজন শহীদ সাংবাদিক। এই নিবন্ধে তাদের জীবনী ও অবদানের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুল, কলকাতা হেয়ার স্কুল, কলকাতা মাদ্রাসা, বালিগঞ্জ সরকারি ডেমনস্ট্রেশন হাই স্কুল, ফরিদপুর জেলা স্কুল, দৈনিক পূর্বদেশ
গোলাম মোস্তফা (কবি), কাজী গোলাম রব্বানী (পিতা), কাজী গোলাম সরওয়ার (পিতামহ), অনির্বাণ মোস্তফা (ছেলে), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আব্বাস উদ্দিন, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন, আশরাফুজ্জামান খান
মনোহরপুর (ঝিনাইদহ), দামুকদিয়া, ফাজিলপুর, শৈলকূপা, কলকাতা, ব্যারাকপুর, বালিগঞ্জ, ফরিদপুর, ঢাকা, নীলফামারী, পঙ্গাগ্রাম
মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, কবি, লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ, ইসলামি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য, ঝিনাইদহ, ঢাকা, ১৯৭১