মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ
মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার, এম এ সাত্তার নামে পরিচিত, বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ১৯২৫ সালের ১ মার্চ রংপুরের দুর্গাপুরে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ব্যবসায়িক সাফল্য ও রাজনৈতিক অবদানের জন্য স্মরণীয়। তিনি সাত্তার অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, সাত্তার জুট মিলস লিমিটেড, হাসনা শিপবিল্ডিং অ্যান্ড নেভিগেশন লিমিটেড ও রংপুর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তার সাত্তার জুট মিলসে ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করত।
১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি পাকিস্তান জুট অ্যাসোসিয়েশনের (PJA) প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে আরও দুবার পুনর্নির্বাচিত হন। PJA-এর প্রতিনিধিত্ব করে তিনি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানের পাট শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেন। তিনি পাকিস্তান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (PJMA) ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার নারায়ণগঞ্জের ‘রংপুর হাউস মাসদাইরে’ অভিযান চালায়। এই সময় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তৌফিক সাত্তার ও তার বন্ধু জালাল আহমেদ নিহত হন। তবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি পুরষ্কারের কারণে তার নিজের জীবন রক্ষা পায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতীয়করণের ফলে তার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের অধীনে চলে যায়। তিনি বাংলাদেশী পাটকল মালিকদের সংগঠিত করেন এবং জাতীয়কৃত পাটকলগুলি তাদের প্রাক্তন মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেন। ১৯৮২ সালে এই সংগ্রামে সাফল্য অর্জন হয়।
১৯৮০-এর দশকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাটমন্ত্রী এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন।
সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। রূপগঞ্জে সাত্তার জুট মিলস মডেল হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সালের ৫ জুন ৮৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।