মেজর জলিল: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক ও লেখক
মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিল (৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ - ১৯ নভেম্বর, ১৯৮৯), যিনি মেজর জলিল নামেই অধিক পরিচিত, বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, একজন সফল রাজনীতিক এবং একজন সমাদৃত লেখক।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
বরিশাল জেলার উজিরপুরে ১৯৪২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মেজর জলিল। তার পিতা আলী শিকদার ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ১৯৫৯ সালে উজিরপুর ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের মারি ইয়ং ক্যাডেট ইনস্টিটিউশন থেকে আই.এ. পাস করেন।
সামরিক জীবন ও মুক্তিযুদ্ধ:
১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ট্রেনি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। সামরিক কর্মজীবনে তিনি বি.এ. এবং ইতিহাসে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৭০ সালে মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নভেম্বর মাসে তাকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক জীবন:
মুক্তিযুদ্ধের পর, ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে মেজর জলিল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। জাসদের নেতৃত্বে তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচী পরিচালনা করেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়লাভ করতে পারেননি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বারবার গ্রেফতার ও কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন। ১৯৮১ সালে ত্রিদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে জাসদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণ করেন।
লেখক জীবন:
মেজর জলিল একজন সুদক্ষ লেখক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে “সীমাহীন সময়”, “দৃষ্টিভঙ্গী ও জীবন দর্শন”, “সূর্যোদয়”, “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা”, এবং “Bangladesh Nationalist Movement for Unity: A Historical Necessity”।
মৃত্যু:
১৯৮৯ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মৃত্যুবরণ করেন মেজর জলিল।