মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৫:০৯ পিএম

মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (রহ.): একজন বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত, মুফাসসির, লেখক ও বাগ্মীর জীবনী

মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (১৩ এপ্রিল ১৯৩২ - ১৯ নভেম্বর ২০০৭) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত, মুফাসসির, লেখক ও বাগ্মী। তিনি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে নূরুল কুরআন’ এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও তার প্রায় অর্ধশত মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে। লালবাগ শাহী মসজিদের খতিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তার জীবন ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ইসলামি চিন্তাধারার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:

১৯৩২ সালের ১৩ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার বাঘমারা গ্রামের মিয়া বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ আলী মিয়া এবং মাতা আনোয়ারুন্নেছা। তার পিতা ছিলেন একজন দানবীর আলেম, যিনি রহমতগঞ্জ গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে ৬০ বছর ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন পিতার প্রতিষ্ঠিত রহমতগঞ্জ মাদ্রাসা এবং স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে।

শিক্ষাজীবন ও আধ্যাত্মিক সাধনা:

১৯৪৭ সালে তিনি জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম, বড় কাটরা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে জাফর আহমদ উসমানির পরামর্শে নোয়াখালী ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় সারাদেশে ৫ম স্থান অধিকার করেন। আধ্যাত্মিকতায় তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম কারী মুহাম্মদ তৈয়ব ও মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর শিষ্য ছিলেন।

কর্মজীবন ও অবদান:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বে সিমেন্ট ব্যবসা ও জুট মিলের মালিক ছিলেন। স্বাধীনতার পর পুস্তক প্রকাশনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। আল বালাগ পাবলিকেশন্স, গাওসিয়া পাবলিকেশন্স ও আন নূর পাবলিকেশনস নামে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল। ঢাকার চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ ও লালবাগ শাহী মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা রেডিও ও টেলিভিশনে কুরআনের তাফসীর ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৭৯ সালে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সফর করেন। তিনি একাধারে ১৪ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গর্ভনসের সদস্য ছিলেন। তার বহু সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল।

স্বীকৃতি ও সম্মাননা:

তার মৌলিক রচনার জন্য ১৯৮৯ সালে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পুরস্কার’ পান। ১৯৯২ সালে মিশরের কায়রোস্থ আন্তর্জাতিক সম্মলনে ‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক (ফাস্টগ্রেড)’ লাভ করেন।

মৃত্যু:

২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়:

মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম (রহ.) একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন যাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের ইসলামি চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার তাফসীর গ্রন্থ, বক্তৃতা ও রচনাগুলি আজও পাঠক ও শ্রোতাদের কাছে প্রিয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ তাফসীর ‘তাফসীরে নূরুল কুরআন’ রচনা
  • লালবাগ শাহী মসজিদের খতিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন
  • প্রায় অর্ধশত মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ রচনা
  • ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পুরস্কার ও মিশরের প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক লাভ
  • ঢাকা রেডিও ও টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।