মুরাদনগর: কুমিল্লা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়। ৩৪০.৭৩ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৩°৩০´ থেকে ২৩°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫২´ থেকে ৯১°০৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে নবীনগর, দক্ষিণে চান্দিনা ও দেবীদ্বার, পূর্বে দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া ও কসবা এবং পশ্চিমে দাউদকান্দি, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মুরাদনগরের জনসংখ্যা ৫২৩,৫৫৬। গোমতী ও বুড়ি নদী এবং কার্জন খাল এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়। ১৮৫৮ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত মুরাদনগর ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, মুরাদনগর মুগল আমলে বলদা খাল পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। কৃষক আন্দোলন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে এ উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে পান্তিবাজার ও চাপিতলা যুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই ভূমি। এই যুদ্ধগুলিতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণে লড়াই করেছিলেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮০ টি মসজিদ, ৪৬ টি মন্দির, ৮ টি মাযার এবং ১ টি তীর্থস্থান উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার দিক থেকে, উপজেলার শিক্ষার হার ৪৮.৮%। ২২ টি কলেজ, ৫০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৯২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪৩ টি মাদ্রাসা রয়েছে।
মুরাদনগরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, মসুর, কলাই, সরিষা প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, জাম, কলা প্রধান ফল। উল্লেখযোগ্য শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে রাইস মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিড়ি কারখানা এবং ওয়েল্ডিং কারখানা উল্লেখযোগ্য। কুটিরশিল্প হিসেবে স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, তাঁতশিল্প ইত্যাদি বিদ্যমান। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ৪২৯ কিমি পাকা রাস্তা, ১৫ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ২৪০ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। উপজেলায় ৮০ টি হাটবাজার রয়েছে।