মির্জাপুর: টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত মির্জাপুর উপজেলা, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঢাকা থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার দূরে এবং টাঙ্গাইল শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। উত্তরে বাসাইল ও সখিপুর, দক্ষিণে ঢাকার ধামরাই, পূর্বে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং পশ্চিমে দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলা মির্জাপুরকে ঘিরে রয়েছে। ৩৭৩.৮৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় বংশাই ও লৌহজং নদীর প্রবাহ রয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
মির্জাপুরের ঐতিহ্য গভীর। ১৯১৩ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮২ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয় এবং এটিকে বাংলাদেশের প্রথম ‘উন্নীত থানা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মির্জাপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোড়াই ইউনিয়নের সাটিয়াচড়া, রামপুর, পাথরঘাটা, নয়াপাড়া এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। পাকুল্লায় একটি বধ্যভূমি এবং গোড়াই-সাটিয়াচড়ায় একটি গণকবরের অস্তিত্ব রয়েছে। আরও ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে পাকুল্লার তিন গম্বুজবিশিষ্ট অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাচীন মসজিদ উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি:
মির্জাপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, সরিষা, আলু প্রভৃতি ফসল উৎপাদন হয়। এছাড়াও গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ ও বিভিন্ন কুটির শিল্প (স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, কাঁসাশিল্প ইত্যাদি) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। গোড়াই ইউনিয়নে বেশ কিছু ভারি শিল্প কারখানা ও স্থাপিত হয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
মির্জাপুরের শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য। এখানে কলেজ, মেডিকেল কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ এর উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ইত্যাদি রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
মির্জাপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা পাকা ও কাঁচা রাস্তা, নৌপথ এবং রেলপথের মাধ্যমে সাধারণ। পল্লি বিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা রয়েছে।
জনসংখ্যা:
২০১১ সালের আদমশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মির্জাপুর শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২৮,৬০২ এবং পরিবার সংখ্যা ৬১২৯ টি। সাক্ষরতার হার ৬৯.৭%। উপজেলার মোট জনসংখ্যা এখন বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়, তবে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।