মাহফুজুর রহমান: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ
১৯৪৯ সালের ১০ই মে ঢাকার লালবাগের চকবাজারস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান খান সড়কে জন্মগ্রহণ করেন মাহফুজুর রহমান খান। তার পিতার নাম হাকিম ইরতিজা-উর-রহমান খান। ৬ ভাই ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা মাহফুজুর রহমানের চাচা ইরতিফা-উর-রহমান খান ছিলেন বিশ শতকের ৬০ থেকে ৮০-র দশকের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আবু নুর মোহাম্মদ এহতেশামুর রহমান ও মুস্তাফিজুর রহমান তার ফুফাতো ভাই ছিলেন।
ছাত্রজীবনে চিত্রগ্রহণের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন মাহফুজুর রহমান। তিনি জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবির সেটে গিয়ে চিত্রগ্রহণ শেখা শুরু করেন এবং আবদুল বারী চৌধুরী ও আবদুল লতিফ বাচ্চুর কাছে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৭০ সালে ‘দর্পচুর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বছর ‘জল্লাদের দরবার’ ছবিতে প্রধান চিত্রগ্রাহক এবং নায়ক হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন। তবে পরবর্তীতে তিনি চিত্রগ্রহণের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়েন।
১৯৭৩ সালে আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবিতে প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করার পর তিনি হুমায়ুন আহমেদসহ অসংখ্য পরিচালকের শতাধিক ছবির চিত্রায়ন করেন। ‘ঝুমকা’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অভিযান’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’, ‘মহানায়ক’, ‘সহযাত্রী’, ‘জোকার’, ‘ভেজা চোখ’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘জন্ম-মৃত্যু’, ‘কালো গোলাপ’, ‘পোকা মাকড়ের ঘরবসতি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘আমার আছে জল’, ‘মেঘলা আকাশ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘স্বপ্ন ডানায়’, ‘বৃত্তের বাইরে’, ‘দরিয়া পাড়ের দৌলতি’, ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘ঘেটু পুত্র কমলা’, ‘এক কাপ চা’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘আমার দেশের মাটি’, ‘পদ্ম পাতার জল’, ‘একাত্তরের মা জননী’ – এসব ছবির চিত্রগ্রহণে তার অবদান অসাধারণ। চিত্রায়নের কাজে তিনি ভারত, নেপাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ‘নীতিবান’, ‘দুর্ণাম’, ‘সম্মান’, ‘কৈফিয়ত’ ছবি প্রযোজনা করেছেন।
১৯৮৩ সালে ‘প্রিন্সেস টিনা খান’ চলচ্চিত্রের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন। ‘অভিযান’ (১৯৮৪) ছবির জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ‘সহযাত্রী’, ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘আমার আছে জল’, ‘ঘেটুঁপুত্র কমলা’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘বৃত্তের বাইরে’ ছবির জন্য তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ‘হাজার বছর ধরে’ ছবির জন্য তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ও এম আবদুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা পান।
১৯৭৮ সালে শিক্ষাবিদ নিরাফাত আলম শিপ্রার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মাহফুজুর রহমান। তার স্ত্রী ২০০১ সালের ২৭শে আগস্ট ক্যান্সারে মারা যান। নিঃসন্তান মাহফুজুর রহমান ২০১৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর মারা যান।