গোয়া: ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি ছোট্ট কিন্তু অসাধারণ রাজ্য। এটি ক্ষেত্রফলের দিক থেকে ভারতের ক্ষুদ্রতম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ ক্ষুদ্রতম রাজ্য। উত্তরে মহারাষ্ট্র, পূর্ব ও দক্ষিণে কর্ণাটক এবং পশ্চিমে আরব সাগরের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এই রাজ্যটির রাজধানী পানাজি এবং বৃহত্তম শহর ভাস্কো দা গামা। ঐতিহাসিক মারগাও শহর পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাব বহন করে।
গোয়ার ইতিহাস: ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পর্তুগিজরা গোয়া দখল করে এবং প্রায় ৪৫০ বছর শাসন করে। ১৯৬১ সালে ভারত গোয়া দখল করে নেয়। পর্তুগিজ শাসনের সময় গোয়ায় এক অনন্য সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে, যা পূর্ব ও পশ্চিমের মেলবন্ধনকে প্রতিফলিত করে। বিভিন্ন যুগের শাসকদের, যেমন মৌর্য সাম্রাজ্য, বৌদ্ধ শাসক, ভোজ রাজবংশ, কাদম্ব রাজবংশ ইত্যাদি, গোয়ার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দিল্লি সালতানাত, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, বাহমানি সুলতানাত এবং বিজাপুর সুলতানাতের শাসনও গোয়ার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।
গোয়ার ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রকৃতি: গোয়া কোঙ্কণ অঞ্চলে অবস্থিত, পশ্চিমঘাটের সুন্দর পাহাড় ও আরব সাগরের মনোরম সমুদ্রসৈকত নিয়ে গোয়া অপরূপ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। মন্দোভি, জুয়ারি, তেরেকহোল প্রমুখ নদী গোয়ার ভৌগোলিক চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এখানকার জীববৈচিত্র্য অতুলনীয়। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, পাখি, প্রাণী ও সরীসৃপ গোয়ার প্রকৃতির অঙ্গ।
গোয়ার অর্থনীতি: পর্যটন গোয়ার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক গোয়ার সুন্দর সমুদ্রসৈকত, প্রাচীন স্থাপত্য, ধর্মীয় স্থান এবং জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে আসে। খনিজ সম্পদ, কৃষি ও মাঝারি শিল্প গোয়ার অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
গোয়ার জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি: গোয়ার জনসংখ্যা কম, কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্য রাজ্যের তুলনায় বেশি। গোয়া একটি বহু-সংস্কৃতির সমাজ। পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক শাসনের কারণে এখানে পূর্ব ও পশচিমের সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়। হিন্দু, খ্রিস্টান এবং মুসলিম সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে সহাবস্থান করে। কোঙ্কানি এখানকার রাজ্য ভাষা।
গোয়ার উল্লেখযোগ্য স্থান: পানাজি, মারগাও, ভাস্কো দা গামা, ওল্ড গোয়া (ভেলহা গোয়া), বিভিন্ন সমুদ্রসৈকত (কলানগুট, বাম্বলিম প্রভৃতি), বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ইত্যাদি।