মান্না: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ
সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার, অর্থাৎ মান্না, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন। ১৪ এপ্রিল ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণকারী এই অভিনেতা ও প্রযোজক তার চব্বিশ বছরের কর্মজীবনে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তার অভিনীত 'আম্মাজান' ছবিটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি। 'বীর সৈনিক' ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন, এবং 'আম্মাজান' ছবির জন্য পান মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার। তিনি তিনবার মেরিল-প্রথম আলো এবং বেশ কয়েকবার বাচসাস পুরস্কারে ভূষিত হন।
মান্নার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে 'কাসেম মালার প্রেম', 'দাঙ্গা', 'লুটতরাজ', 'তেজী', 'আম্মাজান', 'শান্ত কেন মাস্তান', 'কষ্ট', 'বীর সৈনিক', 'অবুঝ শিশু', 'সাজঘর', 'উত্তরের খেপ', 'কাবুলিওয়ালা রুটি', 'বসিরা' ইত্যাদি। তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৫ সালে 'পাগলী' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবনে পা রাখেন। যদিও তার প্রথম ছবি ছিল 'তওবা'। ১৯৯১ সালে 'কাসেম মালার প্রেম' চলচ্চিত্রে প্রথম একক নায়ক হিসেবে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নেন।
মান্না কেবল অভিনেতা ছিলেন না, তিনি একজন সফল প্রযোজকও ছিলেন। 'লুটতরাজ', 'স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ', 'দুই বধু এক স্বামী', 'আমি জেল থেকে বলছি', 'পিতা মাতার আমানত' সহ মোট আটটি চলচ্চিত্র তিনি প্রযোজনা করেছেন। তিনি 'কৃতাঞ্জলী' চলচ্চিত্র নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে মান্না তার সহ-অভিনেত্রী শেলী কাদেরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের এক পুত্র সন্তান সিয়াম ইলতিমাস মান্না রয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে ৪৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তাকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার মৃত্যুর পর তার পরিবার ইউনাইটেড হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে মামলা করে।
মান্নার স্মৃতি ধরে রাখতে বিএফডিসিতে তার নামে 'মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স' নামে একটি ভবন নামকরণ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন নিয়মিত 'মান্না উৎসব' আয়োজন করে থাকে। তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে। মান্না বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরস্থায়ীভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।