মাদারীপুর সদর থানা, বর্তমানে উপজেলা হিসেবে পরিচিত, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রশাসনিক এলাকা। ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী এই অঞ্চলটি ১৯৮৪ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়। মাদারীপুর জেলার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এই উপজেলাটি ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, পঞ্চদশ শতাব্দীর সুফি সাধক বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদারের নামানুসারে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকালে ইদিলপুর ও কোটালীপাড়া নামে পরিচিত এই অঞ্চলটি চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অংশ ছিল এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। গ্রিকবীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে কোটালীপাড়া অঞ্চলে গঙ্গারিডাই জাতি স্বাধীনভাবে রাজত্ব করত বলে ঐতিহাসিকদের মতে।
মুঘল আমলে ফতেহাবাদ সরকারের অন্তর্গত এই অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনামলে বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা এবং ১৮৭০ সালে মাদারীপুর থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করে এই অঞ্চলের প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন হয়।
মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর সদর উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর এখানে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং এলাকাটি মুক্ত হয়। এই যুদ্ধে ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ভৌগোলিকভাবে মাদারীপুর সদর উপজেলা আড়িয়াল খাঁ, ঘাঘর ও কুমার নদীর তীরবর্তী। এটি একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল এবং খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাজিমউদ্দিন কলেজ, ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ডনোভান সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ইত্যাদি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ৩৪টি মহল্লা, ১৫টি ইউনিয়ন, ১৫৯টি মৌজা ও ২৩৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলার জনসংখ্যা, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপলব্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।