বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘মহাজোট’ শব্দটি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক জোটকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দটির সাথে সবচেয়ে বেশি পরিচিত জোটটি হলো ১৪-দলীয় মহাজোট, যা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গঠিত হয়েছিল। এই মহাজোটের মূল অংশীদার ছিল আওয়ামী লীগ। তবে, বেশ কিছু সংখ্যক দল এই মহাজোটের সাথে যুক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
১৪-দলীয় মহাজোটের গঠন ও ইতিহাস:
২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর বিরোধীদলীয় অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই হামলার পর আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং আরও কয়েকটি দল মিলে একটি জোট গঠন করে। এই জোট পরবর্তীতে ১৪-দলীয় মহাজোটে পরিণত হয়। তবে, জোট গঠনের পর কয়েকটি দল বেরিয়ে যায় এবং কিছু দল যোগ দেয় বিভিন্ন সময়ে। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম জোট ত্যাগ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন জোটে যোগ দেয়। ২০১৩ ও ২০১৯ সালে জাতীয় পার্টি (জাপা) জোট ত্যাগ করে।
মহাজোটের অংশীদার দল:
১৪-দলীয় মহাজোটে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যান্য দলগুলির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-রেজাউর), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ এবং ন্যাপ (মোজাফফর) ইত্যাদি। তবে, দলগুলোর সংখ্যা ও সংমিশ্রণ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
অন্যান্য মহাজোট:
‘মহাজোট’ শব্দটি বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ধর্মীয় সংগঠন যা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে। এর গঠন, লক্ষ্য ও কার্যক্রম রাজনৈতিক মহাজোটের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এছাড়াও, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন জোটকে ‘মহাজোট’ নামে ডাকা হতে পারে। এজন্য, প্রসঙ্গানুসারে ‘মহাজোট’ শব্দের অর্থ স্পষ্ট করার প্রয়োজন হতে পারে।