মনিকা চাকমা: এক নক্ষত্রের উত্থান
বাংলাদেশী নারী ফুটবলে এক নতুন নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটেছে মনিকা চাকমার মাধ্যমে। ২০০৩ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকা সুমন্ত পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মনিকা একজন মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে দেশের ফুটবল অঙ্গনে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। কৃষক পরিবারের সন্তান মনিকার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা এবং মা রবি মালা চাকমা। পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোটো।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি মনিকার অদম্য আগ্রহ ছিল। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাড়ার ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলায় অংশ নিতেন তিনি। বড় বোন অনিকা চাকমা এবং চাচাত ভাই কিরণ চাকমা ছিলেন তার খেলার সঙ্গী। ২০১০ সালে লক্ষ্মীছড়ির মরাচেঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে রাঙামাটি মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিরসেন চাকমার নজরে পড়ে মনিকা। তার উৎসাহে রাঙামাটিতে পড়াশুনা এবং ফুটবলের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখেন। ২০১৩ সালে তিনি বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হন। এরপর অনূর্ধ্ব-১৪ দলে জাতীয় দলে ডাক পান এবং ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এএফসির টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে তিনটি গোল করেন।
থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছেন মনিকা। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে। মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে তার অসাধারণ গোল ফিফার ‘ভক্তদের প্রিয়’ কনটেন্টে স্থান পায়। ফিফা এই গোলকে ‘জাদুকরী গোল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মনিকাকে ‘ম্যাজিকেল চাকমা’ উপাধিতে ভূষিত করে। রাঙামাটি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠ শেষে মনিকা ঘাগড়া কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মনিকা চাকমা বাংলাদেশী নারী ফুটবলের জন্য অনুপ্রেরণা। তার ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা।