মথুরা: উত্তরপ্রদেশের একটি ঐতিহাসিক ও পবিত্র নগরী
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মথুরা শহর ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গভীরভাবে জড়িত। আগ্রা থেকে প্রায় ৫০ কিমি উত্তরে এবং দিল্লি থেকে প্রায় ১৪৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই শহরটি মথুরা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, মথুরার জনসংখ্যা ছিল ৪,৪১,৮৯৪। প্রাচীনকালে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র ছিল।
ধর্মীয় গুরুত্ব:
হিন্দুদের কাছে মথুরা অত্যন্ত পবিত্র। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান। শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির এই বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু। সাতটি পবিত্র হিন্দু শহরের মধ্যে মথুরা অন্যতম। রামায়ণ ও মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে মথুরার উল্লেখ রয়েছে। মথুরা নামটি বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়েছে, যেমন মউজপুর, মধুপুরী, মধুবন, মধুরা, মদুরা। বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসেও মথুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাজকুমার উপগুপ্ত এখানেই বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে সম্রাট অশোককে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক স্থাপনা:
মথুরায় অসংখ্য ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- দ্বারকাধীশ মন্দির (১৮১৪ সালে নির্মিত): শহরের প্রধান মন্দির, যেখানে হোলি ও জন্মাষ্টমী উৎসব ব্যাপক উৎসাহের সাথে পালিত হয়।
- কেশব দেও মন্দির/শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির: ভক্তদের বিশ্বাস, এটিই শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান। এই মন্দির ও ঈদগাহকে কেন্দ্র করে বিতর্ক রয়েছে।
- কংসকিলা বা কংসের দুর্গ: জনশ্রুতি অনুযায়ী, অত্যাচারী রাজা কংস এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন।
- মদনমোহন মন্দির/গীতা মন্দির: গীতার ৭০০ শ্লোক খোদিত থাম ও পৌরাণিক চিত্রাবলী সমৃদ্ধ একটি আকর্ষণীয় মন্দির।
- জামা মসজিদ (১৬৬১ সালে নির্মিত): চারটি বড় মিনারবিশিষ্ট একটি মসজিদ।
- গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম: মৌর্য, শুঙ্গ, কুষাণ ও গুপ্ত যুগের অসংখ্য পুরাকীর্তির সমৃদ্ধ সংগ্রহ রয়েছে এখানে।
অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান:
বলভদ্র কুণ্ড, সরস্বতী কুণ্ড, পোট্রা কুণ্ড, শিবতাল, পাগলা বাবা মন্দির, ভুতেশ্বর মন্দির, গোকর্নেশ্বর মন্দির, রঙ্গেশ্বর মন্দির, পিপ্লেশ্বর মন্দির, যমুনা বাগ, গুরুদোয়ারা, চৌরাশিয়া (জৈন সিদ্ধক্ষেত্র)।
ভারত সরকারের ঐতিহ্য শহর উন্নয়ন এবং অগমেন্টেশন যোজনার অন্তর্গত করা হয়েছে মথুরা কে।