ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (Research and Analysis Wing, সংক্ষেপে RAW) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হলো। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, গোয়েন্দা তথ্যের অভাবের কারণে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৮ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন প্রধান জেনারেল জে এন চৌধুরী প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশবন্তরাও চৌহানকে জানিয়েছিলেন যে, সঠিক গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে রামেশ্বর নাথ কাও এই সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং শঙ্করণ নায়ার দ্বিতীয় কর্মকর্তা ছিলেন। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) থেকে প্রায় ২৫০ জন কর্মকর্তাকে ‘র’-তে বদলি করা হয়। ১৯৭১ সাল থেকে কাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরাসরি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়। মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং একাধিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দক্ষ গোয়েন্দাদের বাছাই করা হয়। জয়দেব রানাডে, যিনি পরে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসর নেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হন।
বর্তমানে, প্রায় ৯৫% কর্মকর্তা ভারতীয় পুলিশ সেবা (আইপিএস) থেকে নির্বাচিত হন এবং কিছু কর্মকর্তাকে কাস্টমস ও আয়কর বিভাগ থেকে অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংগ্রহের জন্য নেওয়া হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সংস্থার অভ্যন্তরেই সমালোচনা রয়েছে। প্রাক্তন প্রধান বিক্রম সুদ মনে করেন, আইপিএস কর্মকর্তাদের বয়স ও প্রশিক্ষণের কারণে তারা এই কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। গোয়েন্দা কাজের জন্য ভাষা, অর্থনৈতিক, সাইবার, এবং কৌশলগত দক্ষতা অপরিহার্য, যা আইপিএস কর্মকর্তাদের দেওয়া হয় না।
'র'-এর কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিদেশে অনুপ্রবেশ, ধরা পড়া এড়ানো, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং যোগাযোগ স্থাপন –সহ বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ লাভ করে। আত্মরক্ষার জন্য ক্রাভ মাগার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসে 'আন্ডার-কভার' এজেন্ট হিসেবেও মোতায়েন করা হয়। পরিচয় গোপন রাখা ও দেশ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয় সবসময়ই তাদের থাকে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি কূটনৈতিক প্রোটোকল রয়েছে যে, একে অপরের দেশে যে গুপ্তচরদের পাঠানো হয় তাদের নাম আগে থেকেই জানাতে হবে।
'র' এবং পাকিস্তানের আইএসআই-এর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও গোপন কার্যকলাপের নানা ঘটনা প্রচলিত আছে। 'র' ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহী, আর আইএসআই সেনাপ্রধানের কাছে। 'র' দেশের ভিতরে কোনও গোয়েন্দা কাজ চালায় না, কিন্তু আইএসআই তা করে। কার্গিল যুদ্ধে ৮০ জন 'র' কর্মকর্তা পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম সফল অভিযান চালান, যার নাম গোপন রাখা হয়েছে। ১৯৯৯ সালের আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণের ঘটনায়ও 'র'-এর ভূমিকা ছিল, এবং সে ঘটনায় তাদের অনেক কিছু মেনে নিতে হয়েছিল।