বোদা উপজেলা: পঞ্চগড় জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, বোদা। ৩৪৯.৪৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২৬°০৫′ থেকে ২৬°২৩′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৭′ থেকে ৮৮°৪৬′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে পঞ্চগড় সদর, দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও সদর ও দেবীগঞ্জ, পূর্বে দেবীগঞ্জ, এবং পশ্চিমে আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদর উপজেলায় বোদা ঘেরা। এই উপজেলায় ভারতের কয়েকটি ছিটমহলও অবস্থিত যেমন, নাজিরগ, শালবাড়ি, মেয়েলিয়া, দৈখাতা ও ময়দানদিঘি।
জনসংখ্যা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: বোদার জনসংখ্যা প্রায় ২৩২১২৪, যার মধ্যে পুরুষ ১১৬৫৫৫ এবং মহিলা ১১৫৫৬৯। ধর্মীয়ভাবে, ১৭৭৪৬২ মুসলিম, ৫৩৯৮৯ হিন্দু, এবং খুব অল্পসংখ্যক বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে। করতোয়া, টাংগন, এবং পাথরাজ এই উপজেলার প্রধান নদী। বোদা থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৩ সালে, পরবর্তীতে এটি উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এটি দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমার অধীনে ছিল, এবং ১৯৮৪ সালে পঞ্চগড় জেলার অধীনে আনা হয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: বোদার ইতিহাস সমৃদ্ধ। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে দেবীসিংহের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহ, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০), সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭), তেভাগা আন্দোলন (১৯৩৮-১৯৪৭), কৃষক আন্দোলন (১৯৫৮-৬৮), এবং ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে বোদার মানুষ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধেও বোদার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা যুদ্ধ, পাকবাহিনীর নির্যাতন, এবং ১৮ এপ্রিল বোদা শহর দখলের ঘটনা ইতিহাসের অংশ। ১ ডিসেম্বর বোদা শত্রুমুক্ত হয়।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন: বোদার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ব্যবসা, পরিবহন, চাকরি, নির্মাণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার কম হলেও, সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। শিক্ষার হার ৫১.৮%, যা পুরুষদের জন্য ৫৫.০% এবং মহিলাদের জন্য ৪৮.৬%। বোদায় বেশ কয়েকটি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা রয়েছে।
সাংস্কৃতিক ও পর্যটন: বোদায় চন্দনবাড়ি মসজিদ, বোদেশ্বরী মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, গোলোকধাম মন্দির, নয়নীবুরুজ, নয়াদিঘি ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি হাটবাজার ও মেলা বোদার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক।