বেড়া উপজেলা: পাবনার একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বেড়া উপজেলা বাংলাদেশের পাবনা জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি এবং জনসংখ্যাগত দিক থেকে বেড়া উপজেলা বেশ উল্লেখযোগ্য।
ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা:
বেড়া উপজেলা পাবনা জেলার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। উত্তরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও চৌহালি উপজেলা, দক্ষিণে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলা এবং মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা, এবং পশ্চিমে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা অবস্থিত। গঙ্গা, ইছামতি, যমুনা, বাদাই, আত্রাই এবং হুরাসাগর নদী বেড়া উপজেলার জলসম্পদকে সমৃদ্ধ করেছে।
ইতিহাস:
বেড়ার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। কিছু মতে, আরবী ‘বেড়ুহা’ শব্দ থেকে ‘বেড়া’ শব্দের উৎপত্তি। পূর্বে এটি শম্ভুপুর নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্ট জন্মের পূর্বে থেকেই উত্তরবঙ্গের নদ-নদীর সঙ্গমস্থলে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। ৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে আরব বণিকরা বেড়ায় তাদের বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। সুলতানি আমলে আরবদেশের দুর্ভিক্ষের সময় বেড়া বন্দর থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি করা হতো। ১৮২৮ সালে মথুরা থানা যমুনার ভাঙনে বিলীন হওয়ার পর বেড়ায় পুনঃস্থাপিত হয়। ১৯৬০ সালে বেড়া উন্নয়ন সার্কেল এবং ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল উপজেলায় উন্নীত হয়। মুক্তিযুদ্ধেও বেড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নগরবাড়ী ফেরিঘাট, পাইকরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বেড়ার জনসংখ্যা ছিল ২৩১,৪৩০ জন। বেড়া উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আখ, ডাল, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, আলু ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। তাছাড়াও, ব্যবসা, পরিবহণ, চাকরি, শিল্প ইত্যাদিও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বেড়ায় কিছু ছোট ছোট বনানী রয়েছে যেখানে লোমশ প্রাণী বিদ্যমান।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
বেড়া উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদ্রাসা এবং ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। শিক্ষার হার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসালয় আছে।
উল্লেখযোগ্য দিক:
বেড়া তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, নদী-নালা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এখানকার লোকজন বন্ধুসুলভ এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ।
উপসংহার:
বেড়া উপজেলা পাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার উন্নয়নের চেষ্টা চলছে।