বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও (NGO) সম্পর্কে একটি বিস্তারিত নিবন্ধ:
বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও (Non-Governmental Organizations) গুলো দারিদ্র্য বিমোচন, পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, এবং অন্যান্য সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এদের কার্যক্রমের বিস্তার ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হলেও, পরবর্তীতে এনজিওগুলি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে জড়িত হয়েছে।
এনজিওর তিনটি প্রধান পর্যায়:
১. প্রাথমিক পর্যায় (১৯৫০ এর দশক): ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং দাতব্য কার্যক্রম।
২. দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৬০ ও ৭০ এর দশক): ঋণ সমিতি, সমবায় সমিতি এবং কমিউনিটি ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প।
৩. তৃতীয় পর্যায় (১৯৮০ এর দশক থেকে বর্তমান): কৃষি সংস্কার, পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৈদেশিক সহায়তা ব্যবস্থাপনা এবং সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম।
বিভিন্ন ধরণের এনজিও:
এনজিওগুলো বিভিন্ন আকার, কার্যক্রম এবং লক্ষ্যবস্তু অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। কিছু এনজিও স্থানীয়, আবার কিছু জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে। কিছু এনজিও বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে কাজ করে (যেমন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি), আবার কিছু সমন্বিত কার্যক্রম চালায়।
গুরুত্বপূর্ণ এনজিও:
ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, প্রশিকা, আশা, কারিতাস, এইসব এনজিও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এদের অনেক কার্যক্রম অন্যান্য দেশেও অনুকরণ করা হয়েছে।
সরকারের সঙ্গে এনজিওর সম্পর্ক:
সরকার এনজিও নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন আইন, বিধিবিধান এবং অধ্যাদেশ তৈরি করেছে। এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো (১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত) এনজিও নিবন্ধন, তাদের কার্যক্রমের তদারকি এবং বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে সহায়তা করে। সরকার-এনজিও পরামর্শ পরিষদ সরকার এবং এনজিওর মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখে।
বর্তমান চ্যালেঞ্জ:
বেশ কিছু এনজিও এখন উপার্জনমূলক কার্যক্রমে জড়িত। কিছু কিছু এনজিওর জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশি তহবিলের উপর নির্ভরতা কমাতে এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করার জন্য সংস্কার প্রয়োজন। এছাড়া, এনজিওগুলির সংখ্যা ও কার্যক্রমের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য সঠিক তথ্য প্রয়োজন।