৩০০ ফুট সড়কের বেপরোয়া গতি এবং মৃত্যুর ধারা
রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়ক। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আধুনিক সৌন্দর্যের ছবি। কিন্তু এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা – বেপরোয়া গতি এবং প্রাণহানির ধারাবাহিকতা। দিনের পর দিন এই সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা, প্রাণ যাচ্ছে তরুণ-তরুণীর।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ (২২) এই সড়কে পুলিশের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় নিহত হন। এই ঘটনায় আরও দুই বুয়েট শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এর আগে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর বউরারটেক এলাকায় কলেজছাত্রী সুজানা (১৮) এবং তার বন্ধু শাইনুর রশিদ কাব্যর (১৬) এবং ভূঁইয়াবাড়ী ব্রিজ এলাকায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ৮ ডিসেম্বর মুরগি বহনকারী একটি গাড়ির দুর্ঘটনায় এক মাদরাসাছাত্রও প্রাণ হারান। গত এক সপ্তাহে ৩০০ ফুট সড়কের ঢাকা মহানগর অংশে তিনজন এবং রূপগঞ্জ অংশে পাঁচজন মারা গেছেন। গত পাঁচ বছরে এই সড়কে ৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যার ৯০% মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।
এই বেপরোয়া গতির পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। সড়কটির মসৃণতা ও আলোকসজ্জার কারণে তরুণরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালান। গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার থাকলেও, গাড়িগুলি ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে। পুলিশের চেকপোস্ট থাকা সত্ত্বেও, গতি নিয়ন্ত্রণে তাদের মন নেই। তারা বেশি কেন্দ্রীভূত গাড়ির কাগজপত্র এবং অবৈধ মালপত্র পরীক্ষায়। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় স্পিডগানসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও নেই। সড়কের দুই অংশের নিয়ন্ত্রণ ঢাকা মহানগর পুলিশ ও রূপগঞ্জ পুলিশের হাতে থাকায় সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে।
অনেকেই রাতের মায়াবী দৃশ্য উপভোগের জন্য এই সড়কে আসেন। তবে বেপরোয়া গতি, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, এবং হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালানো – সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকা এবং সচেতনতার অভাব এই দুর্ঘটনার পিছনে প্রধান কারণ। তাদের মতে, সাঁড়াশি অভিযান এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।