বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯: একটি বিশ্লেষণ
২০০৯ সালের ১৬ নং আইন হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বর্ধমান ภัยজনিত পরিস্থিতির মোকাবেলায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক প্রথমে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংসদে এ আইনটি পাস হয়। আইনটিতে ১০টি অধ্যায় ও ৪৫টি ধারা রয়েছে এবং ২০১১ সালের ১১ জুন থেকে কার্যকর।
- *আইনের মূল দিকগুলি:**
- **সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা:** আইনে সন্ত্রাসবাদকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও সংহতিকে হুমকির মুখে ফেলার উদ্দেশ্যে জনসাধারণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এই ধরণের কাজের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ২০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
- **অতিরাষ্ট্রীয় প্রযোজ্যতা:** আইনটি বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ, বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালেও তাকে বাংলাদেশের আইনের আওতায় আনা হবে।
- **আর্থিক সহায়তা:** সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অর্থ সরবরাহের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়েছে। অর্থ সরবরাহকারীদের তিন থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এই আইনের প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
- **নিষিদ্ধ সংগঠন:** সরকারের প্রয়োজন মনে করলে কোনও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা যাবে এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- **বিশেষ ট্রাইব্যুনাল:** সন্ত্রাসবাদী অপরাধের দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।
- *আইনের সমালোচনা:**
এই আইনটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়েছে। অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান এবং যথাযথ বিচারের অধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। তবে, সন্ত্রাসবাদের বর্ধমান হুমকির মুখে এই আইনটির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
- *তথ্যসূত্র:**
- Bangladesh Gazette (Extraordinary), 24 February 2009।