বিরোধ

বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প পন্থা: বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে বিরোধ নিষ্পত্তির ঐতিহ্যগত আদালত-কেন্দ্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (Alternative Dispute Resolution - ADR) পদ্ধতির ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পদ্ধতিগুলো, যেমন মধ্যস্থতা এবং সালিশি, আদালতের বাইরে বিরোধ সমাধানে সহায়তা করে। পারিবারিক বিরোধ, দেওয়ানি মামলা এবং অর্থঋণ সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

  • *পারিবারিক বিরোধ:** ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা রাখা হলেও, ২০০০ সালে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার সহযোগিতায় নির্বাচিত পারিবারিক আদালতগুলোতে আলাপ-আলোচনা, মধ্যস্থতা ও সালিশির মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আশাব্যঞ্জক ফলাফলের পর, এই প্রক্রিয়াটি আরও আদালতে সম্প্রসারিত হয়।
  • *দেওয়ানি মামলা:** ২০০৩ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি (সংশোধনী) আইনে দেওয়ানি মামলায় মধ্যস্থতা ও সালিশির ব্যবস্থা সংযোজন করা হয় (ধারা ৮৯ক ও ৮৯খ)। তবে অর্থঋণ আদালতের মামলা এ আওতার বাইরে রাখা হয়। মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে, আদালত মামলাটি মধ্যস্থতাকারীর কাছে পাঠাতে পারে, যিনি ৬০ দিনের মধ্যে (আবশ্যক হলে ৩০ দিন বাড়ানো যাবে) বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করবেন। সালিশের ক্ষেত্রে, পক্ষগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে আদালত মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দিতে পারে। ২০০৬ সালের সংশোধনী আইনে আপীল মামলার ক্ষেত্রেও মধ্যস্থতার ব্যবস্থা করা হয় (ধারা ৮৯গ)।
  • *অর্থঋণ আদালত:** ২০০৩ সালের অর্থঋণ আদালত আইনের ৫ম অধ্যায়ে ফয়সালামূলক বৈঠক ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়। এই আইনে মামলায় সমঝোতা বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়, এবং বৈঠক ব্যর্থ হলে মধ্যস্থতার ব্যবস্থা রাখা হয়। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিরপেক্ষ আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত জজ বা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা যায়।
  • *আদালত সংস্কার:** ২০০৪ সালের আদালত সংস্কার (সহায়ক বিধানাবলি) বাস্তবায়ন আইনে সুপ্রিম কোর্ট এবং কিছু জেলা আদালত (ঢাকা, গাজীপুর, খুলনা, কুমিল্লা ও রংপুর) জুডিশিয়াল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রজেক্টের অধীনে আইনের প্রয়োগ সাময়িকভাবে শিথিল করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিগুলোর লক্ষ্য দ্রুত, কম খরচে এবং অধিক সুসম্পন্নভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা। তবে, এই পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে মধ্যস্থতাকারী বা সালিশিদের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার উপর।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৮৫ সালে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সূচনা।
  • ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন।
  • ২০০৩ সালে দেওয়ানি কার্যবিধিতে মধ্যস্থতা ও সালিশির ধারা সংযোজন।
  • ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত আইনে ফয়সালামূলক বৈঠক ও মধ্যস্থতার ব্যবস্থা।
  • ২০০৪ সালে আদালত সংস্কার আইনে কিছু আদালতে প্রকল্পের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ শিথিলকরণ।