কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা: উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা হলো কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা। ১৫৬.৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৫°৩২´ থেকে ২৬°০৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৮´ থেকে ৮৯°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, পূর্বে নাগেশ্বরী উপজেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাট সদর উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। এখানে তিনটি ছিটমহল রয়েছে।
জনসংখ্যা ও ধর্ম: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ফুলবাড়ীর জনসংখ্যা প্রায় ১৬০,২৫০; যার মধ্যে পুরুষ ৭৮,৫৬৮ এবং মহিলা ৮১,৬৮২। ধর্মীয়ভাবে, ১৪৩,৪৪৭ জন মুসলিম, ১৬,৭৬৩ জন হিন্দু, ৬ জন খ্রিস্টান এবং ৩৪ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
জলাশয় ও প্রশাসন: ধরলা ও নীলকমল নদী ফুলবাড়ী উপজেলার প্রধান জলাশয়। ১৯১৪ সালে ফুলবাড়ী থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক স্থান: ফুলবাড়ীতে বিষ্ণু মন্দির, নাওডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি এবং মন্দিরের মতো প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ২৭ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনাদের সাথে সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান শহীদ হন। ২০শে এপ্রিল, ধরলা নদীর কলাখাওয়া ঘাটে পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশের চেষ্টাকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিহত করে। কুলাঘাটে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের একটি দলকে এম্বুশের মাধ্যমে প্রতিহত করে। কাউয়াহাগা ঘাট যুদ্ধ এবং কলাখাওয়া যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: ফুলবাড়ীতে শিক্ষার হার ৪৪.৮% (পুরুষ ৫০%, মহিলা ৩৯.৮%)। ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৩), নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৯), ফুলবাড়ী জসিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮) এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৩টি লাইব্রেরি, ১১টি ক্লাব এবং ১টি সিনেমা হল রয়েছে।
অর্থনীতি: কৃষি (৭৪.২৮%), অকৃষি শ্রমিক (৫.১৮%), ব্যবসা (৯.৩১%) এবং অন্যান্য উৎস ফুলবাড়ীর জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস। ধান, গম, পাট, আলু, পান, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন এবং শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, জাম, কামরাঙ্গা, সুপারি, লটকন প্রধান ফল-ফলাদি।
যোগাযোগ ও অন্যান্য: ১০০.৩৪ কিমি পাকারাস্তা, ৪১২.৭৪ কিমি কাঁচারাস্তা এবং ২ কিমি নৌপথ ফুলবাড়ীর যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ। বিসুকট ফ্যাক্টরি, আইস ফ্যাক্টরি এবং স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজের মতো কুটিরশিল্প রয়েছে। ১৬টি হাটবাজার রয়েছে। সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার ১৪.৭%। নলকূপ (৯৮.৫%) পানীয়জলের প্রধান উৎস।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৮৮ সালের বন্যা ফুলবাড়ীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
এই তথ্যগুলো বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তবে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে আমরা তা আপডেট করব।