ফাঁসি: এক অমানবিক শাস্তির ইতিহাস
ফাঁসি মৃত্যুদণ্ডের একটি প্রাচীন ও বিতর্কিত পদ্ধতি। শতাব্দী ধরে বিভিন্ন দেশে অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে ফাঁসি প্রযুক্ত হয়েছে। হোমারের ওডিসিতেও ফাঁসি দ্বারা মৃত্যুর উল্লেখ রয়েছে। মধ্যযুগ থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মৃত্যুদণ্ডের প্রধান মাধ্যম ছিল ফাঁসি। আধুনিক যুগে ফায়ারিং স্কোয়াড, ইলেকট্রিক শক, এবং প্রস্তর নিক্ষেপের মতো অন্যান্য পদ্ধতি থাকলেও ফাঁসি অনেক দেশেই প্রধান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- *স্বাধীন ভারতের প্রথম ফাঁসি:** ১৯৪৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এটি স্বাধীন ভারতে প্রথম ফাঁসি।
- *ফাঁসির পদ্ধতি:** ফাঁসির বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ‘শর্ট ড্রপ’ পদ্ধতিতে দোষীকে উঁচু স্থান থেকে ঝুলানো হয়। ‘লং ড্রপ’ পদ্ধতিতে দোষীর ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ফাঁসির দড়ির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয় যাতে গলা ভেঙে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়। এই পদ্ধতি ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ জল্লাদ উইলিয়াম মারউড প্রবর্তন করেন।
- *ভারতে ফাঁসি:** ভারতে স্বাধীনতার পর থেকে সকল মৃত্যুদণ্ড ফাঁসি দিয়ে কার্যকর করা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ভারতে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় (২০০৪), আজমল কাসাব (২০১২), আফজাল গুরু (২০১৩) এবং ২০১২ দিল্লি গণধর্ষণের দোষী চারজন (২০২০)। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদণ্ডকে ‘বিরলতম ক্ষেত্রে’ প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেছে।
- *অন্যান্য দেশে ফাঁসি:** ইরান, সিঙ্গাপুর, জাপান সহ অনেক দেশেই এখনও ফাঁসি মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে ফাঁসি আত্মহত্যার একটি সাধারণ পদ্ধতি। কানাডা এই ক্ষেত্রে সর্বাধিক উদাহরণ।
- *ফাঁসি: একটি মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন:** ফাঁসি অনেক বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থার মতে একটি অমানবিক ও নির্মম শাস্তি। এটি মৃত্যুদণ্ড বিরোধীদের প্রধান বক্তব্য। বিভিন্ন দেশে এর বিরোধিতা চলে আসছে এবং অনেক দেশে ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছে।