ফসল রক্ষা বাঁধ

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৫:৩৮ এএম

সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধ: একটি গভীর বিশ্লেষণ

সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জীবিকার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ বহু বছর ধরে চলে আসছে। তবে, কাজের গুণগত মান, সময়োচিত বাস্তবায়ন ও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে এটি সর্বদা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ২০১৭ সালের অকাল বন্যার পর থেকে বাঁধ নির্মাণ পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলেও, সমস্যা সমাধানে তা পর্যাপ্ত হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। এই নিবন্ধে আমরা সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধের বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

প্রকল্পের বিবরণ:

সুনামগঞ্জে ৩৮২টি হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প (পিআইসি) অনুমোদিত হয়েছে, যার ব্যয় ৬৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্প ১২টি উপজেলার বড় হাওরগুলোকে অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বেই অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করার জন্য কৃষক ও কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয়েছে।

কাজের ধরণ এবং সমস্যা:

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক ৩৮২টি বাঁধের প্রি-ওয়ার্ক জরিপ অনুযায়ী প্রাক্কলন তৈরি করা হলেও, কর্ম এলাকার পরিচয় বর্ণনা এবং হাওড়ের নামের বিকৃতি ঠেকাতে কৃষকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, কাজের এলাকা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং কাজের প্রাক্কলনে অনিয়ম রয়েছে। বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক কামাল মিয়া বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কেবলমাত্র কত কিলোমিটার বাঁধ হবে তা-ই উল্লেখ করেছে, কোথায় ও কত কিলোমিটার কাজ হবে তার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। জামালগঞ্জের কৃষক নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের পর থেকে বাঁধ নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে, এবং তৎকালীন সরকার দলীয়রা এর সাথে জড়িত।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ:

বিশ্বম্ভরপুরের আল আমিন নামের একজন কার্যকরী সাত বছর একই কর্মস্থলে থাকার কারণে পিআইসি গঠন করে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় কৃষক ও সাংবাদিকদের অভিযোগ, তিনি বিগত সময়ে তৎকালীন সরকার দলীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পিআইসি গঠনের জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

সরকারী কর্মকর্তাদের বক্তব্য:

পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাঁধের বর্তমান চিত্র অনুযায়ী জরিপ করে প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে এবং কাজের এলাকা আরও স্পষ্ট করে পরিচয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, আল আমিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন তারা। তাদের মতে, একই স্থানে দীর্ঘদিন থাকলে কর্মীদের দুর্নীতির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

কাজের সময়সীমা ও অগ্রগতি:

নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো বছরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। এ বছরও হাওরের অনেক স্থানে কাজের অগ্রগতি ন্যূনতম। কাজে বিলম্বের জন্য এক্সকাভেটরের অপ্রতুলতা ও নির্বাচনকে দায়ী করা হলেও, অনেক ক্ষেত্রে কাজ শুরুতেই গাফিলতি দেখা গেছে।

উপসংহার:

সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধের ক্ষেত্রে গুণগত মান, সময়োচিত বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতির অভিযোগ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারী তদারকি, জবাবদিহিতা, কৃষকদের অংশগ্রহণ এবং নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং কৃষকেরা তাদের ফসল রক্ষায় সুফল পাবেন। আরও তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথেই আমরা এই নিবন্ধ আপডেট করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • সুনামগঞ্জে ৩৮২টি হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প অনুমোদন।
  • ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ উপজেলার বড় হাওর রক্ষার লক্ষ্য।
  • প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
  • কৃষক ও কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা।
  • ২০১৭ সালের অকাল বন্যার পর থেকে বাঁধ নির্মাণে পরিবর্তন।
  • কাজের গুণগত মান ও সময়োচিত বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।