প্লাস্টিক: অভিশাপ নাকি বরদান?
প্লাস্টিক, আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সস্তা, টেকসই এবং বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই সুবিধার সাথে সাথে প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি হিসেবেও উঠে এসেছে।
ইতিহাসের পাতায়:
১৮৫৫ সালে আলেকজান্ডার পার্কস প্রথম মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক ‘পার্কেসিন’ আবিষ্কার করেন। ১৯০৭ সালে লিও বেকল্যান্ড ‘বেকেলাইট’ আবিষ্কারের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেন এবং ‘প্লাস্টিক’ শব্দটির প্রচলন ঘটান। নোবেলজয়ী হারম্যান স্টাউডিংগার ও হারম্যান মার্ক প্লাস্টিকের রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখেন।
বিশ্বব্যাপী ব্যবহার ও দূষণ:
প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ১৯৫০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৯.২ বিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে। এর অধিকাংশই প্যাকেজিং, গৃহ নির্মাণ, অটোমোবাইল ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিকের অপচনশীলতা পরিবেশের জন্য এক বিরাট সমস্যা। চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সহ অনেক দেশ সমুদ্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে অধিক প্লাস্টিক ফেলে। গঙ্গা, মেকং, ইন্দাস, নীলনদ সহ বিশ্বের প্রধান নদীগুলি এই প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে বহন করে।
পরিবেশগত প্রভাব:
প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। প্লাস্টিকের অপচনশীলতা মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকের উৎপাদন করে, যা খাদ্য শৃঙ্খলে মিশে জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্লাস্টিকের অনেক অ্যাডিটিভ (যেমন বিসফেনল এ) ক্ষতিকারক ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। সম্প্রতি প্লাস্টিক কারণে সমুদ্রপাখির একটি নতুন রোগ 'প্লাস্টিকোসিস' চিহ্নিত হয়েছে।
সমাধানের পথ:
প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে। প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। প্লাস্টিকের বিকল্প পরিবেশবান্ধব উৎপাদন বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরী। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের অনেক সংস্থা এই ক্ষেত্রে কাজ করছে।
উপসংহার:
প্লাস্টিক এক দ্বিমুখী অস্ত্র। এর সুবিধা অনস্বীকার্য, কিন্তু এর ক্ষতিকারক প্রভাব ও অস্বীকার করা যায় না। সুষম ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্লাস্টিকের ঋণাত্মক প্রভাব কমানো সম্ভব।