পারাদ্বীপ: ওড়িশার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বন্দর নগরী
ওড়িশা রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলায় অবস্থিত পারাদ্বীপ (পারাদীপ) শুধুমাত্র একটি শহর নয়, বরং ভারতের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও শিল্প কেন্দ্র। ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সালে এটি নগরায়ন কর্পোরেশন (NAC) হিসেবে গঠিত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর ২০০২ সালে পুরসভায় রূপান্তরিত হয়। এই শহরটি কটক শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
জনসংখ্যা ও সাক্ষরতা:
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, পারাদ্বীপের জনসংখ্যা ছিল ৭৩,৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৮% এবং নারী ৪২%। শহরটির সাক্ষরতা হার ৭৩%, যা ভারতের জাতীয় গড় ৫৯.৫% এর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতা হার ৭৯% এবং নারীদের মধ্যে ৬৫%।
বন্দর ও শিল্প:
পারাদ্বীপ বন্দর ওড়িশার প্রধান বন্দর এবং ভারতের পূর্ব উপকূলের অন্যতম বৃহত্তম বন্দর। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই বন্দরটি একটি কৃত্রিম বন্দর, যা মানুষের তৈরি লেগুনের মাধ্যমে জাহাজগুলিকে প্রবেশের সুযোগ দেয়। ২০১৭-২০১৮ সালে এই বন্দরটি ১০ কোটি টনেরও বেশি পণ্য পরিবহন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তাপীয় কয়লা এবং লোহা আকরিক।
পারাদ্বীপে বিভিন্ন বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান অবস্থিত, যেমন IFFCO, পারাদ্বীপ ফসফেটস লিমিটেড, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন, ভারত পেট্রোলিয়াম, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, নুমালিগড় রিফাইনারী লিমিটেড এবং গোয়া কার্বন লিমিটেড। এছাড়াও, ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার POSCO কর্তৃক নির্মিত ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বিশাল ইস্পাত কারখানাসহ অনেক নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পরিকল্পনা রয়েছে। পারাদ্বীপকে ভারতের ছয়টি প্রধান পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল বিনিয়োগ অঞ্চল (PCPIR) এর মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক দিক:
১৭ শতকের গোড়ার দিকে, পারাদ্বীপ এবং তার আশেপাশের এলাকাগুলি মহানদী নদী এবং তার শাখাগুলির মাধ্যমে কটকের সাথে যুক্ত ছিল। ১৮১৯ সালে ব্রিটিশরা বর্তমান পারাদ্বীপের উত্তরে 'ফলস পয়েন্ট' নামে একটি বন্দর নির্মাণ করেছিল, যা ১৮৬৬ সালের দুর্ভিক্ষকালে খাদ্য সামগ্রী আমদানির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে রাষ্ট্রীয় সরকারের উদ্যোগে পারাদ্বীপে একটি ছোট বন্দর গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে জওহরলাল নেহেরু পারাদ্বীপ বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৬৬ সালে বন্দরটি উদ্বোধন করা হয়।
যোগাযোগ:
পারাদ্বীপ জাতীয় সড়ক ৫৩ এবং রাজ্য সড়ক ১২ এর সাথে সংযুক্ত। এটি পূর্ব উপকূলের ব্রডগেজ বৈদ্যুতায়িত রেল ব্যবস্থার সাথেও সংযুক্ত। বাস যোগাযোগের মাধ্যমে এটি রাউরকেলা, কলকাতা, পুরী এবং কনারকের সাথে যুক্ত।
অন্যান্য তথ্য: এই শহরের ১২% জনসংখ্যা ৬ বছর বা তার কম বয়সী। বিস্তারিত ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক তথ্যের জন্য আমরা আরও গবেষণা করছি এবং পরবর্তীতে আপডেট দিতে পারব।