পাপুয়া নিউগিনি: একটি বিশদ পর্যালোচনা
পাপুয়া নিউগিনি, এর পূর্ণ নাম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেট অব পাপুয়া নিউগিনি, প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এটি ওশেনিয়া মহাদেশের মেলানেশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। দেশটি নিউগিনি দ্বীপের পূর্ব অংশ নিয়ে গঠিত, যার পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্বে সলোমন দ্বীপ অবস্থিত। পোর্ট মোর্সবি হলো এর রাজধানী। দেশটির আয়তন ৪,৬২,৮৪০ কিমি²(১,৭৮,৭০০ মা২)।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১৮৮০ সালে দেশটি উত্তরে জার্মান নিউগিনি এবং দক্ষিণে পাপুয়া অঞ্চল নামে দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে, বর্তমান পাপুয়া নিউগিনি অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি প্রচণ্ড যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালে পাপুয়া নিউগিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রেখে। ২০২২ সালে এলিজাবেথের মৃত্যুর পর থেকে তৃতীয় চার্লস পাপুয়া নিউগিনির রাজা।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি:
পাপুয়া নিউগিনিতে ৮৪০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে (ইংরেজি সহ), যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভাষাগত বৈচিত্র্যময় দেশগুলির একটি করে তোলে। দেশটির অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং প্রাচীন প্রথাগত সম্প্রদায়ভুক্ত। যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জানা যায় যে, জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ।
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য:
দেশটি অনেক অনথিভুক্ত প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে খনিজ, বন, সামুদ্রিক সম্পদ (বিশ্বের প্রধান টুনা সম্পদ মজুদের একটি বড় অংশ) এবং কিছু কৃষি জমি উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পাপুয়া নিউগিনিকে উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। জনসংখ্যার প্রায় ৪০% কৃষক।
আন্তর্জাতিক সংস্থা:
১৯৭৬ সাল থেকে পাপুয়া নিউগিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতি সংস্থা (আসিয়ান) এর পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র এবং পূর্ণ সদস্যপদের জন্য আবেদন করে আসছে। এটি কমনওয়েলথ, দ্য প্যাসিফিক কমিউনিটি, দ্য প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরাম এবং জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য।
নারীর প্রতি সহিংসতা:
পাপুয়া নিউগিনিকে নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশে ধর্ষণের ঘটনা প্রচুর, এবং শিকারদের অনেকেই ১৫ বছরের কম বয়সী। সরকার পরিবার সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে, কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার জন্য আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
দেশটির পার্বত্য অঞ্চল বিশাল এবং দুর্গম, পরিবহনের জন্য একটি প্রধান বাধা। উচ্চ পর্বতমালা, উপত্যকা, জলাভূমি, দ্বীপপুঞ্জ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উচ্চ ব্যয়ের কারণে বিদেশী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এখানে কাজ করা কঠিন। দেশটি প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ারের উপর অবস্থিত, ফলে ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত সাধারণ ঘটনা।
অতিরিক্ত তথ্য:
পাপুয়া নিউগিনির ইতিহাস, প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার, কৃষিকাজের উৎপত্তি, নরমাংসভোজন, মিশনারীদের আগমন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামরিক সংস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য উপলব্ধ হলে আমরা আপনাদেরকে অবগত করব।