পাংশা: রাজবাড়ীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল পাংশা। ২৫০.৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ঢাকা বিভাগের অংশ। ২২°৪০´ থেকে ২২°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৯´ থেকে ৮৯°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে পাবনা সদর ও সুজানগর উপজেলা, দক্ষিণে শৈলকূপা, শ্রীপুর (মাগুরা) ও বালিয়াকান্দি উপজেলা, পূর্বে কালুখালী উপজেলা এবং পশ্চিমে খোকসা ও কুমারখালী উপজেলা অবস্থিত।
জনসংখ্যা ও গঠন: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পাংশার জনসংখ্যা ছিল ২৪৩২৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২১৭২৩ জন এবং মহিলা ১২১৫৬২ জন। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা মুসলিম (২২৪৬৯০), হিন্দু (১৮৫৮৮), খ্রিস্টান (৫) এবং অন্যান্য (২)। পদ্মা ও গড়াই নদী এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
প্রশাসন ও ইতিহাস: পাংশা থানা ১৮৬৩ সালে গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে পৌরসভা গঠিত হয়। ঐতিহাসিক দিক থেকে, ১৮৬০ সালে বাবুপাড়া ইউনিয়নের ভৈরব বাবু নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এছাড়াও, ১৯২০ সালে সাহিত্যিক এয়াকুব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন পাংশায় শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযুদ্ধের দুটি বধ্যভূমি এখনও স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিদ্যমান।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন: পাংশার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৬৭.৯৭%), অকৃষি শ্রমিক (২.৮৭%), শিল্প (০.৭৫%), ব্যবসা (১১.৬৩%), পরিবহণ ও যোগাযোগ (৩.২৭%), চাকরি (৫.১২%), নির্মাণ (১.১১%), ধর্মীয় সেবা (০.১৫%), রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স (০.৪৮%) এবং অন্যান্য (৬.৬৫%)। ধান, পাট, আখ, পান, তিল প্রধান কৃষি ফসল। উপজেলায় বিভিন্ন কুটিরশিল্প (স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প ইত্যাদি) এবং ধানকল, বরফকল জাতীয় ছোটোখাটো শিল্পকারখানা রয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: উপজেলার গড় শিক্ষার হার ৪৮.৩%। এখানে ১০টি কলেজ, ৩টি ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ক্লিনিক রয়েছে। ব্র্যাক ও আশা জাতীয় এনজিওগুলো এখানে কাজ করে।
পাংশা উপজেলায় পদ্মা ও গড়াই নদী উল্লেখযোগ্য জলাশয়। যোগাযোগের জন্য পাকা রাস্তা, আধা-পাকা রাস্তা, কাঁচারাস্তা, নৌপথ এবং রেলপথ ব্যবহার করা হয়। কালুখালী হাট, বাগদুলী হাট ও পাংশা হাট এবং হাবাশপুর মেলা ও শ্মশানবাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রয়েছে।