পলিথিন

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

পলিথিন: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

পলিথিন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এতটাই অভিন্ন হয়ে উঠেছে যে, আমরা প্রায়ই এর গুরুত্ব ও প্রভাব সম্পর্কে ভেবে দেখি না। এই সাদা, নমনীয় পদার্থটি, যা আমরা খাবারের মোড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের প্যাকেজিং, ব্যাগ, এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহার করি, আসলে একটি অসাধারণ রাসায়নিক আবিষ্কারের ফলাফল। পলিইথিলিন বা পলিথিন (সংক্ষেপে পিই; ইউপ্যাক নাম: পলিথিন বা পলি(মিথাইলিন)) হলো বর্তমানে ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ প্লাস্টিক। ১৮৯৮ সালে জার্মান রসায়নবিদ হান্স ফন পেখমান দুর্ঘটনাবশত এটি আবিষ্কার করেন, যদিও তখন এর ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ডের নর্থউইচে ইম্পেরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (আইসিআই) এর এরিক ফসেট এবং রেজিনাল্ড গিবসন দুর্ঘটনাবশত শিল্পকারখানায় পলিইথিলিন ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করেন। ১৯৩৫ সালে আইসিআই-এর আরেকজন রসায়নবিদ মাইকেল পেরিন এই প্রক্রিয়াটিকে পুনরুৎপাদনযোগ্য করে তোলেন, যার ফলে ১৯৩৯ সাল থেকে লো-ডেনসিটি পলিথিলিন (এলডিপিই) এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, এর উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও তরঙ্গের প্রতি কম ক্ষতির বৈশিষ্ট্যের জন্য গোপনীয়তা আরোপ করা হয় এবং ইউএইচএফ ও এসএইচএফ কক্সিয়াল কেবলের জন্য ইনসুলেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৪৪ সালে টেক্সাসের বেটেলিকর্পোরেশন এবং পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ডু পন্ট আইসিআই থেকে লাইসেন্স নিয়ে পলিথিনের বড় পরিসরে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে।

পলিথিনের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনুঘটকের ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৫১ সালে রবার্ট ব্যাংকস এবং ফিলিপস পেট্রোলিয়াম জে পল হোগা ক্রোমিয়াম ট্রাইঅক্সাইড-ভিত্তিক অনুঘটক আবিষ্কার করেন, এবং ১৯৫৩ সালে কার্ল জিগলার টাইটানিয়াম হ্যালিডেস ও অর্গানোঅ্যালুমিনিয়াম যৌগের উপর ভিত্তি করে আরও একটি ক্যাটালিটিক সিস্টেম উদ্ভাবন করেন। এই আবিষ্কারগুলি উচ্চ-ঘনত্বের পলিইথিলিন (এইচডিপিই) উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। পলিইথিলিন প্রধানত পেট্রোলিয়াম থেকে উৎপন্ন হয়, যা একটি নবায়নযোগ্য নয় এমন সম্পদ।

পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটি পরিবেশে সহজে মিশে না, ফলে পরিবেশ দূষণের একটি প্রধান উৎস। ২০১১ সালে ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর জাপানে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে। জাপান প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে, কিন্তু বড় পরিমাণ প্লাস্টিকের মোড়ক এখনও পুনর্ব্যবহারের বাইরে থাকে। ২০০৮ সাল থেকে জাপান প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধি করলেও এখনও বড় পরিমাণে প্লাস্টিকের মোড়ক পুনর্ব্যবহার করা হয়নি; যা শুধুই বর্জ্য। ২০০৮ সাল থেকে, জাপান দ্রুত প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু এখনও বড় পরিমাণ প্লাস্টিকের মোড়ক পুনর্ব্যবহার করা শুরু হয় নি; যা শুধুই বর্জ্য। ২০২০ সালে, আকিনোরি ইতো একটি মেশিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করেন যা পলিথিন থেকে তেল উৎপাদন করতে পারে। পলিথিনের বিকল্প খোঁজা এবং পুনর্ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৮৯৮ সালে হান্স ফন পেখমান দুর্ঘটনাবশত পলিথিন আবিষ্কার করেন।
  • ১৯৩৩ সালে আইসিআই-এর বিজ্ঞানীরা শিল্পক্ষেত্রে পলিথিন ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করেন।
  • পলিথিন পরিবেশে দ্রুত মিশে না এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বড় সমস্যা তৈরি করে।
  • পলিথিনের বিকল্প খোঁজা ও পুনর্ব্যবহার জরুরি।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - পলিথিন

২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

পরিবেশ উপদেষ্টা পলিথিনের বিকল্প খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন