পবা: রাজশাহীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলা, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং ভৌগোলিক সৌন্দর্যের জন্য সমানভাবে পরিচিত। ৩৪০.০৩ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৪°১৮´ থেকে ২৪°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৮´ থেকে ৮৮°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে মোহনপুর ও তানোর, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও চারঘাট, পূর্বে পুঠিয়া ও দুর্গাপুর এবং পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলার সাথে এর সীমানা জুড়ে আছে।
- *জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:** ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পবার জনসংখ্যা ৩১৪১৯৬, যার মধ্যে পুরুষ ১৫৯৪৫২ এবং মহিলা ১৫৪৭৪৪। এখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা বাস করে। সাঁওতাল, ওরাওঁ, পাহাড়িয়া ও বুনো সহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব এই উপজেলাকে আরও বর্ণময় করে তুলেছে। পদ্মা ও শিব নদী এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
- *প্রশাসন ও ইতিহাস:** ১৯৪৯ সালে পবা থানা গঠিত হয় এবং ১১ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৬২ সালে হুজুরীপাড়া সারুসা গ্রামে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ভারত বিভাগের পর, ১৯৪৭-১৯৬৫ সালের মধ্যে অনেক মুসলিম পরিবার মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে ভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে এখানে বসতি স্থাপন করে।
- *মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি:** মুক্তিযুদ্ধের সময় পবা উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোনাইকান্দি গ্রামে গণহত্যার একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়াও, বোলনপুর পুলিশ ক্যাম্পে পাকসেনারা হামলা চালায় এবং গোদাগাড়ী হাটে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। সোনাইকান্দিতে একটি গণকবর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের পাশে একটি বধ্যভূমি রয়েছে।
- *শিক্ষা ও সংস্কৃতি:** পবার শিক্ষার হার ৫০.৩%। এখানে ৯টি কলেজ, ৩০টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংস্কৃতির দিক থেকে, এই উপজেলায় ১টি লাইব্রেরি, ২৮টি ক্লাব, ৫টি সিনেমা হল এবং ৬৪টি মহিলা সংগঠন রয়েছে।
- *অর্থনীতি:** পবার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, পাট, আলু প্রভৃতি ফসল উৎপাদন এর মূল অংশ। চিনি, পাট, ধান, পান এই উপজেলার প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। এছাড়াও, বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও কুটিরশিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা চলছে।
- *যোগাযোগ ব্যবস্থা:** পবায় পাকারাস্তা, আধা-পাকারাস্তা, কাঁচারাস্তা, নৌপথ ও রেলপথ রয়েছে। ২ টি রেলস্টেশন ও ১ টি বিমানবন্দর রয়েছে।
- *প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান:** নওহাটা বাগধানী মসজিদ, তরফ পারিলা মসজিদ, মিয়াপুর মসজিদ, হযরত মদন শাহ নিয়ামত উল্লাহ হুসাইন (র.) এর মাযার, এবং প্রাচীন বৌদ্ধ মঠসমূহ এই উপজেলার ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব প্রকাশ করে।
পবা উপজেলা একটি গতিশীল এবং বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। এর ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা ও সুযোগ অনেক।