নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্ভাবনার সমারোহ
ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার অন্তর্গত মোহনগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। ‘ভাটি বাংলার রাজধানী’ হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে এ উপজেলার। এই প্রাচীন জনপদের ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মোহনগঞ্জের বর্তমান রূপ।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
মোহনগঞ্জ উপজেলার অবস্থান ২৪°৪৫´ থেকে ২৪°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৫´ থেকে ৯১°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে বারহাট্টা উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলা, দক্ষিণে আটপাড়া, মদন ও খালিয়াজুড়ি উপজেলা, পূর্বে খালিয়াজুড়ি ও সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে আটপাড়া উপজেলা অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ছিল ১,৩২,২১০ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৬৬,৮৮৮ জন এবং মহিলা ৬৫,৩২২ জন। মোট জনসংখ্যার ৮৪.০৯% মুসলিম, ১৫.৮২% হিন্দু, ০.০৫% খ্রিস্টান এবং ০.০৩% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
অর্থনীতি:
মোহনগঞ্জের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, সরিষা, তুলা প্রধান কৃষি ফসল। মাছ চাষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এখানকার আয়ের উল্লেখযোগ্য উৎস। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই মোহনগঞ্জ ছিল ধান, পাট, মাছ ও সরিষার উল্লেখযোগ্য ব্যবসাকেন্দ্র। ১৯২৫ সালে মোহনগঞ্জ রেল স্টেশন নির্মাণ এবং ১৯২৮ সালে রেল চলাচল শুরু হয়, যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
মোহনগঞ্জের ইতিহাস প্রাচীন। মোহন সাহা নামে একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর নামানুসারে এ শহরের নামকরণ করা হয়েছিল বলে জনশ্রুতি। মোহনগঞ্জ থানা ১৯২০ সালের ৬ এপ্রিল গঠিত হয় এবং ১৯৮২ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা মোহনগঞ্জ থানা দখল করে নেয় এবং ৮ ডিসেম্বর পাথরঘাটায় ১৯ জন রাজাকারকে হত্যা করে। মোহনগঞ্জ পৌরসভা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৬ সালে ১ম শ্রেণীর পৌরসভা হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
প্রশাসন:
মোহনগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৩৩১টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম মোহনগঞ্জ থানার আওতাধীন।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে মোহনগঞ্জ উপজেলা সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে। এখানে ৩টি কলেজ, ১৯টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, ৫টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১২টি মাদ্রাসা রয়েছে। মোহনগঞ্জ বড় মসজিদ ও মোহনগঞ্জ মারকাজ মসজিদ এখানকার উল্লেখযোগ্য মসজিদ। জগন্নাথ মন্দির, কালীমন্দির এবং লোকনাথ আশ্রম এর উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় স্থাপনা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
মোহনগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে বাস ও ট্রেন চলাচল করে। শিয়ালজানি খালের পুনঃখনন এখানকার জলপথের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সমাপ্তি:
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্ভাবনার এক অসাধারণ সমাহার। এই উপজেলার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।