নূরুল মোমেন (২৫ নভেম্বর, ১৯০৬ – ১৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৯) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, নির্দেশক, রম্য লেখক, এবং প্রাবন্ধিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন এবং অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। আধুনিক বাংলা নাটকে অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাকে "নাট্যগুরু" হিসেবে সম্বোধন করা হয়।
তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার (তৎকালীন যশোর জেলা) বুড়োইচ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নুরুল আরেফিন ছিলেন একজন জমিদার ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। নূরুল মোমেন কলকাতায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯১৬ সালে খুলনা জিলা স্কুলে ভর্তি হন। মাত্র ১০ বছর বয়সে (১৯১৯) তার প্রথম কবিতা "সন্ধ্যা" ধ্রুবতারা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। ১৯২০ সালে তিনি ঢাকা মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯২৪ সালে ম্যাট্রিক, ১৯২৬ সালে আইএ এবং ১৯২৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছরেই (১৯২৭) তিনি ক্রীড়া ও নাট্য প্রতিযোগিতায় প্রথম হন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করে ১৯৩৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে ঢাকায় "অল ইন্ডিয়া রেডিও" প্রতিষ্ঠার পর তিনি নতুন এই মাধ্যমে লিখতে শুরু করেন। ১৯৪১ সালে তিনি রেডিওর জন্য "রুপান্তর" নামে একটি কমেডি নাটক রচনা ও নির্দেশনা দেন। এই নাটকটি প্রথাগত মুসলিম বাংলা নাটকের চেয়ে অনেক আধুনিক ধারার ছিল। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৪৮ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান। ১৯৫১ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে অবস্থানকালে তিনি বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠানে শিশুদের আসর পরিচালনা করেন।
তার বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে রয়েছে "নেমেসিস" (১৯৪৮), "যদি এমন হতো" (১৯৬০), "নয়া খান্দান" (১৯৬২), "আলোছায়া" (১৯৬২), "আইনের অন্তরালে" (১৯৬৬), "শতকরা আশি" (১৯৬৭), "রূপলেখা" (১৯৬৯) এবং "যেমন ইচ্ছা তেমন" (১৯৭০)। তিনি রম্য লেখক হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। বহুরূপা, নরসুন্দর, হিং টিং ছট ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য রম্য লেখা। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বহু পুরষ্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন, যার মধ্যে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার (১৯৬১) এবং একুশে পদক (১৯৭৮) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৯ সালে ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।