নূর আলম: দুই ব্যক্তিত্বের কথা
উপরোক্ত লেখা থেকে দুইজন নূর আলম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করার জন্য আমরা তাদের নামের সাথে যোগ করেছি।
প্রথম নূর আলম: নূর কুতুব আলম ছিলেন একজন বিখ্যাত দরবেশ এবং রাজা গণেশের নিপীড়ন থেকে বাংলার মুসলমানদের রক্ষাকারী। তিনি ছিলেন শেখ আলাউল হকের পুত্র ও প্রধান শিষ্য এবং লাহোরের শেখ আসাদের পৌত্র। পান্ডুয়ার পীর আউলিয়াদের মধ্যে তিনি শীর্ষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা পান্ডুয়ার বিখ্যাত শাশ হাজারী দরগায় (যে দরগায় ছয় হাজার টাকার সম্পত্তি দান করা আছে) শায়িত আছেন। তিনি চিশতিয়া মতাদর্শের পীর ছিলেন।
রাজা গণেশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নূর কুতুব আলম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জৌনপুরের সুলতান ইবরাহিম শর্কি ও মীর সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানিকে সাহায্যের অনুরোধ করেন। সুলতান ইবরাহিমের সেনাবাহিনীর আগমনে গণেশ আত্মসমর্পণ করেন এবং নূর কুতুব আলমের শর্ত মেনে মুসলমান হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে গণেশের ছেলে যদুকে ইসলামে দীক্ষিত করে জালালুদ্দীন নামকরণ করা হয়।
তার মৃত্যুর পর গণেশ পুনরায় যদুকে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু পরে গণেশের মৃত্যু হলে যদু জালালুদ্দীন মুহাম্মদ শাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
নূর কুতুব আলম বিনয়ের সাথে কায়িক শ্রম করতেন এবং তার দুই পুত্র শেখ রাফকাতউদ্দীন ও শেখ আনোয়ারকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিয়েছিলেন। তার পুত্র শেখ জাহিদ পিতার মৃত্যুর পর দরবেশ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। খুব সম্ভবত তার পুত্র শেখ আনোয়ার রাজা গণেশের হাতে সোনারগাঁওয়ে শহীদ হন। শেখ নূর কুতুব আলমের অন্য একজন প্রধান মুরিদ ছিলেন শেখ হুসামুদ্দীন মানিকপুরী।
সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ তার দরগাহ সংলগ্ন সরাইখানা ও মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহের জন্য অনেক গ্রাম দান করেন। শেখ নূর কুতুব আলমের মৃত্যুর তারিখ নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না, তবে ৮১৮ হিজরি বা ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দ বলে অনুমান করা হয়।
দ্বিতীয় নূর আলম: নূরে আলম সিদ্দিকী (২৬ মে ১৯৪০ - ২৯ মার্চ ২০২৩) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০-১৯৭২ সালে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাকে শেখ মুজিবুর রহমানের চার খলিফার একজন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। তিনি ২৯ মার্চ ২০২৩ সালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।
আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আরও তথ্য পাওয়া গেলে এই লেখা আরও সমৃদ্ধ করা হবে।