নিকলী: কিশোরগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ভৌগোলিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। ২১৪.৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°১৫´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫২´ থেকে ৯১°০৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে করিমগঞ্জ ও মিঠামইন, দক্ষিণে বাজিতপুর, পূর্বে মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এবং পশ্চিমে কটিয়াদি ও করিমগঞ্জ উপজেলা নিকলীকে ঘিরে রয়েছে।
জনসংখ্যা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নিকলীর জনসংখ্যা ১,৩৩,৭২৯; যার মধ্যে পুরুষ ৬৬,৯৯৭ এবং মহিলা ৬৬,৭৩২। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলিম (১,২৭,১৯০), হিন্দু (৬,৪৯৭), খ্রিস্টান (৪) এবং অন্যান্য (৩৮)। বাউলাই, ধনু, সিঙ্গুয়া ও ঘোড়াউতরা নদী এবং তেগুলিয়া বিল, বড়বিল, বড়লিয়ারকন্দ বিল, নেওরা বিল উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়।
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব:
১৯৮১ সালে নিকলী থানা গঠিত হয় এবং ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। নিকলীতে ঐতিহাসিক গুরাই জামে মসজিদ (১৬৮০ খ্রি.), সাপুর মসজিদ (১৭০০ খ্রি.) এবং কুর্শা শাহী মসজিদ (১৭০৭) উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিকলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকসেনারা শ্বশানঘাটে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং ৬ সেপ্টেম্বর গুরাই গ্রামে ২৫ জনকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা গুরই, মিলচিয়া ও বাজিতপুরে অবস্থান নিয়ে অপারেশন পরিচালনা করে এবং ২০ অক্টোবর নিকলী শত্রুমুক্ত হয়।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
কৃষিই নিকলীর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি (৭২.০৬%)। ধান, গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, হাঁস-মুরগির খামার এবং বিভিন্ন কুটির শিল্প ও উল্লেখযোগ্য। নিকলীতে রাইসমিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ও রুটি ফ্যাক্টরি সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তা রয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার ২৮.৯% (পুরুষ ৩০.৭%, মহিলা ২৭.০%)। উপজেলায় ১টি কলেজ, ৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯টি মাদ্রাসা এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ কলেজ (১৯৯৫) ও নিকলী গোরাচাঁদ পাইলট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮) উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
সারসংক্ষেপে, নিকলী একটি গতিশীল উপজেলা যা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নয়নের সম্ভাবনার সমন্বয়ে পরিপূর্ণ।