নারীর জয়: বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের যাত্রা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার দুটি চরণ, "বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর," স্পষ্ট করে বলে যে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবুও, ঐতিহাসিকভাবে নারীরা সমাজে ও রাষ্ট্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়নের আন্দোলন এই যাত্রার প্রথম ধাপ। তার পর, ১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র ও ১৯৭৯ সালের নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদ নারীর অধিকারকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করেন এবং নারী পুনর্বাসন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসনের জন্য। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে নারী পুনর্বাসন বোর্ড মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় মহিলা সংস্থা হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়নে আরও ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বর্তমানে ৫০। ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে নারীর জন্য ৩৩% আসন বরাদ্দের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তদুপরি, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারীর উন্নয়নে ব্র্যাক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও শালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সহ বিভিন্ন এনজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে নারীর অবদান অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য।
বিশ্বের লিঙ্গ বৈষম্যের তালিকায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা অবস্থানে আছে, তবে নারীর সম্পূর্ণ ক্ষমতায়ন এখনও বাকী। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নারীদের নিজেদের প্রচেষ্টা চলমান। নারীর জয় অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া, যার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।