নাজনীন সুলতানা: বাংলাদেশের এক অসাধারণ নারী ব্যক্তিত্ব
নাজনীন সুলতানা বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন প্রখ্যাত ব্যাংকার, মুক্তিযোদ্ধা, এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামার। ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া নাজনীন সুলতানা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম মহিলা ডেপুটি গভর্নর হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন।
শিক্ষাজীবন:
তার শিক্ষাজীবনের পথচলা শুরু হয় রোকেয়া মেমোরিয়াল স্কুল থেকে। পরবর্তীতে মতিঝিল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাজনীন সুলতানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ডামি ও পরে রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন, যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেন।
ব্যাংকিং ও আইটি ক্যারিয়ার:
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার উপ-বিভাগে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার ব্যাংকিং জীবন শুরু হয়। সেই সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে কম্পিউটার অটোমেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আমদানি-রপ্তানির পরিসংখ্যান বিষয়ক প্রথম প্রোগ্রাম লেখেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসিং সফ্টওয়্যার তৈরির চেষ্টা করেন। ১৯৯২ সালে তিনি তার সহকর্মীদের সাথে মিলে ‘মাধ্যমিক কম্পিউটার বিজ্ঞান’ নামে একটি বই লেখেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সিস্টেম অ্যানালিস্ট এবং ১৯৯৬ সালে জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম নারী নির্বাহী পরিচালক হন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পের সাথেও জড়িত ছিলেন।
অন্যান্য অবদান:
বিভিন্ন সময় তিনি বিআইডিএস এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতেও কর্মরত ছিলেন। বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে মহিলা পরিষদের সাথেও যুক্ত ছিলেন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার পর নাজনীন সুলতানা ডেপুটি গভর্নর পদ থেকে অব্যাহতি পান। তবে তার অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।