নলডাঙ্গা: নাটোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের নাটোর জেলার অন্তর্গত নলডাঙ্গা উপজেলা, ২৪.২৬ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৯ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। বারনই নদের উত্তর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। একসময় নাটোরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই উপজেলার উত্তরে নওগাঁর আত্রাই, দক্ষিণে নাটোর সদর, পূর্বে সিংড়া, এবং পশ্চিমে রাজশাহীর পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলা অবস্থিত।
১৯৪৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে বারনই নদের তীরে নলডাঙ্গার হাট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই হাটকে কেন্দ্র করেই নলডাঙ্গার উন্নয়ন শুরু হয়। হালতিবিলের ধান ও মাছ, এবং বারনই নদের সম্পদ এই হাটের প্রাণশক্তি যোগায়। শনিবার ও মঙ্গলবার বসা এই হাট দূর-দূরান্তের মানুষকে আকর্ষণ করত। ১৯৬১ সালে ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ১৯৬২ সালে রেলওয়ে স্টেশন এবং নৌ-বন্দর গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে হাইস্কুল, ১৯৭২ সালে ডিগ্রি কলেজ, ১৯৭৬ সালে রুপালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি নলডাঙ্গা থানা প্রতিষ্ঠা পায় এবং ২১ জুন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়।
আধুনিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ২০০৩ সালে নলডাঙ্গা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বছরেই গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র (মিল্কভিটা) স্থাপিত হয়। তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০০৫ সালে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও ডাকবাংলো নির্মাণ করা হয় এবং বারনই নদীর উপর একটি ব্রীজ উদ্বোধন করা হয়। একই বছরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০১৩ সালের ২৭ মে নিকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নলডাঙ্গাকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়।
নলডাঙ্গার আয়তন প্রায় ১৭৪.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। ৫টি ইউনিয়ন, ৯৯টি গ্রাম, ১টি পৌরসভা এবং ৭টি ডাকঘর রয়েছে। মোট জনসংখ্যা ১,২৯,৩০৪ এবং ভোটার সংখ্যা ৯২,৭৭৪। শিক্ষার হার ৪১.৭১%। ধান, গম, ভুট্টা, আখ, পান প্রভৃতি ফসলের চাষ হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাণ কোম্পানীর জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীও এখানে বসবাস করে। নলডাঙ্গা সদরে যাওয়ার জন্য নাটোর-নওগাঁ মহাসড়ক, এবং রেলপথে মাধনগর রেলওয়ে স্টেশন ব্যবহার করা হয়। নাব্য সংকটের কারণে নৌপথের ব্যবহার কমে আসছে। বিলহালতী বিলের বৃহৎ অংশ নলডাঙ্গায় অবস্থিত। পাটুল এলাকা পর্যটনের জন্য বিখ্যাত।