বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
ধর্মীয় শিক্ষা বাংলাদেশের জন্য কেবল ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিকতার বিষয় নয়, এটি জাতীয় জীবনের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তি। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের প্রতি আবেগ এবং ধার্মিকতা নিয়ে জীবনযাপন করে আসছে। বিভিন্ন গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও ধর্মীয় চেতনা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৮ সালে আইআইআইটি এবং বিআইআইটির জরিপে দেখা যায়, ৮৬% শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক ধর্মীয় কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। প্রথম আলোর ২০১৯ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ৯৪% তরুণ ধর্মের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।
ধর্মীয় শিক্ষা ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে (মক্তব, এতিমখানা, মাদরাসা)। তবে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি না থাকায় ধর্মীয় উগ্রবাদ, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ব্যাখ্যা সমাজে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইসলামে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে প্রচুর ফজিলত উল্লেখ আছে। তবে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেক্যুলার মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায়, শিক্ষার্থীরা ইসলামী শিক্ষার গভীর তাৎপর্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বর্তমানে অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, সামাজিক মাধ্যমের অত্যধিক ব্যবহার এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব তরুণ প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে, এবং কিশোর অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।
২০২২ সালে ন্যাশনাল একাডেমি ফর এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট (নায়েম)-এর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় পাঠ্যসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন ও নৈতিক শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। একটি প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে কি নৈতিক শিক্ষা দেওয়া সম্ভব? জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মত দেশের উদাহরণ উল্লেখ করা হচ্ছে যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা নেই, কিন্তু নৈতিক মান অধিক। তবে, ওই দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবারের ভূমিকার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করা হয়নি। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ২০১২ প্রণয়ন করা হলেও এর বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই।
ধর্মীয় শিক্ষা তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হলে ধর্মীয় শিক্ষার সঠিক অন্তর্ভুক্তি ও চর্চা নিশ্চিত করা আবশ্যক।