দুর্গাপূজা: বাঙালি সংস্কৃতির মহান উৎসব
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব (সংস্কৃত: दुर्गा पूजा) হিন্দুদের একটি প্রধান উৎসব, যা দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পালিত হয়। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, বিহার, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ (পূর্বাঞ্চল) এবং নেপালে এটি ঐতিহ্যগতভাবে ব্যাপকভাবে পালিত হয়। বাংলা বর্ষপঞ্জির আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই দশ দিনব্যাপী উৎসব, যার মধ্যে শেষ পাঁচটি দিন সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২১ সালে কলকাতার দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত:
দুর্গাপূজার সঠিক উৎপত্তি অস্পষ্ট। কিছু ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, ষোড়শ শতক থেকেই রাজ পরিবার এবং ধনী ব্যক্তিরা দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং আসামে দুর্গাপূজার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। আজ, এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের চেয়েও একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উৎসবে বেশি পরিণত হয়েছে। পৌরাণিক কাহিনীতে দুর্গা দেবী মহিষাসুর নামক অসুরকে বধ করেন, যা শুভের উপর অশুভের বিজয়ের প্রতীক।
পূজা পদ্ধতি:
দুর্গাপূজা মূলতঃ পাঁচ দিনব্যাপী। মহালয়া দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা, যা পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের সূচনাকেও চিহ্নিত করে। ষষ্ঠীতে দেবীর আগমন ও বোধন, সপ্তমী, অষ্টমী, ও নবমীতে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ এবং কার্তিকের পূজা, এবং দশমীতে বিসর্জন। নবপত্রিকা, কুমারী পূজা, সন্ধিপূজা ও মহাস্নান দুর্গাপূজার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুমারটুলির প্রতিমাশিল্পীরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপ্রতিমা সরবরাহ করে থাকেন।
আর্থিক দিক:
দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক প্রভাব অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে এই উৎসব। প্যান্ডেল তৈরি, প্রতিমা নির্মাণ, পোশাক, খাবার, এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ব্যবসায় বেশ আয় হয়।
দুর্গাপূজার সাংস্কৃতিক মহিমা:
দুর্গাপূজা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির এক অংশ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গীত, নাচ, আলোকসজ্জা, আর সামাজিক সংযোগের মধ্য দিয়ে এটি সকলের কোলে স্থান পেয়েছে। আজ এই উৎসব বিশ্বজুড়ে বাঙালি সম্প্রদায়ের বন্ধন কে মজবুত করে একত্রিত করে।