দামুড়হুদা: চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। ৩১১.৯১ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৩°২৯´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৯´ থেকে ৮৮°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে আলমডাঙ্গা ও মেহেরপুর সদর, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও মেহেরপুর সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ২৮৯,৫৭৭ জন। চিত্রা, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব নদী এবং কানাইডাঙ্গা, হাতিডাঙ্গা, কার্পাসডাঙ্গা খাল এ উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বর্ধন করেছে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে দামুড়হুদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীলবিদ্রোহ ও কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৮৬৯ ও ১৮৭৩ সালের খাজনা বন্ধ আন্দোলনে এখানকার কৃষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলার প্রথম কৃষক সম্মেলন এ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধেও দামুড়হুদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়েছিল এ উপজেলার অধিবাসীরা। মদনা গ্রামে পাকবাহিনীর অসংখ্য ঘরবাড়ি পোড়ানো এবং নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখানে শহীদ হয়েছেন, যাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
দামুড়হুদার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। আখ, ধান, গম, ডাল, আলু, যব, ভুট্টা, পাট প্রধান কৃষি ফসল। তবে অকৃষি খাতও ধীরে ধীরে বিকাশে উঠছে। শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে ধানকল, চিনিকল, ময়দাকল উল্লেখযোগ্য। কুটির শিল্পের মধ্যে লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, দারুশিল্প প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পাকা, আধা পাকা ও কাঁচা রাস্তার যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে।
শিক্ষার দিক থেকেও দামুড়হুদা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। উপজেলায় বেশ কিছু কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইব্রেরি, ক্লাব, সমাজকল্যাণ কেন্দ্র ও সিনেমা হল রয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক মাযার, মন্দির এবং মসজিদ এ উপজেলায় অবস্থিত।
সামগ্রিকভাবে দামুড়হুদা একটি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অধিকারী উপজেলা। এর উন্নয়নে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও অগ্রগতি অর্জন সম্ভব।